আগৈলঝাড়া উপজেলার রাজিহার ইউনিয়নের রাজিহার (রাংতা) গ্রামের কেতনার বিলের পাত্রবাড়ীতে ’৭১-এর গণহত্যার শিকার হন অগণিত মানুষ। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলার সময়ে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর বর্বরোচিত হামলায় শহীদ হন তাঁরা। শহীদদের স্মরণে সরকারিভাবে এখানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। ওই স্মৃতিসৌধে ৬২ জন শহীদের নামের তালিকা রয়েছে। কিন্তু ওই সব শহীদের নামের তালিকা হয়নি মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের গেজেটভুক্ত।
ওই সৌধের ২০ নম্বর তালিকায় রয়েছে কাশিনাথ পাত্রের নাম। এ ব্যাপারে নিহত কাশিনাথ পাত্রের ছেলে রাজেন্দ্র নাথ পাত্র বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় ১৬ মে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর গুলিতে অগণিত মানুষ শহীদ হন। তাঁর ভেতরে আমার বাবা কাশিনাথ পাত্রও ছিলেন। শহীদদের স্মরণে সরকারিভাবে এখানে তৈরি করা হয়েছে স্মৃতিসৌধ। সেখানে শহীদদের নামের তালিকা রয়েছে। কিন্তু মুক্তিযোদ্ধা মন্ত্রণালয়ের শহীদদের তালিকায় বা গেজেটে নেই তাঁদের নাম। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার বয়স ছিল ১৭ বছর। আমি তখন মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে থেকে তাঁদের সহযোগিতা করেছি। আমি আমার নামটি মুক্তিযোদ্ধাদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করার জন্য উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে আবেদন করেছি। সরকারের কাছে দাবি, আমার বাবার নামটি যেন শহীদদের তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করে গেজেট প্রকাশ করা হয়।’
এ সময় দেবেন্দ্র নাথ পাত্তরের স্ত্রী মায়া পাত্তর বলেন, ‘স্বাধীনতাযুদ্ধের সময় আমাদের এই পাত্রবাড়ীতে হাজার হাজার মানুষ আশ্রয় নিয়েছিলেন। পাকিস্তানি মিলিটারিরা আমাদের বাড়ির সব ঘরে আগুন লাগিয়ে পুড়িয়ে ফেলে। তখনকার ধানের গোলার ধান পুড়ে যায়। আমাদের বাড়িতে আশ্রয় নেওয়া মানুষগুলোকে পাকিস্তানিরা গুলি করে মেরে ফেলে এবং তাঁদের লাশ ডোবায় ফেলে দেয়। অনেকের লাশ গাছে ঝুলিয়ে রাখে। মিলিটারিরা চলে যাওয়ার পরে মানুষ দূর থেকে এসে গর্ত করে ১৫–২০টি লাশ মাটি চাপা দেয়। আমরা এখনো মাটি খুঁড়তে গেলে সে সময়ের হাড় পাই। আমাদের দাবি, মুক্তিযুদ্ধের এসব স্মৃতি যেন সংরক্ষণ করা হয়।’
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবুল হাশেম জানান, কেতনার বিলের পাত্রবাড়ীর গণহত্যায় যাঁরা শহীদ হয়েছেন, কিন্তু তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হননি; তাঁরা যেন তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারেন সে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।