আমানুর রহমান রনি, ঢাকা
আট পাতার একটি শিশুতোষ বই। নাম ‘সুন্দরবনে সাফওয়াত’, দাম ২০০ টাকা। বইটি কারাগারগুলোয় বেশ আলোচিত। কারণ এর লেখক তামান্না সেতুর স্বামী অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক কর্নেল শেখ সুজাউর রহমান। তাঁর নির্দেশেই কারাগারগুলোর কর্মকর্তারা বইটি কিনতে বাধ্য হন।
‘সুন্দরবনে সাফওয়াত’ তামান্না সেতুর প্রথম বই। বইটিতে সাফওয়াত নামের এক শিশুর সুন্দরবন ভ্রমণকাহিনি লেখা হয়েছে। সাফওয়াত হলো শেখ সুজাউর রহমান ও লেখক তামান্না সেতু দম্পতির সন্তান। আর্ট পেপারে ছাপানো এ বইয়ের মূল গল্পটি ১৫৫৮ শব্দের।
বইটির প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান জলপরির প্রকাশক মোরশেদ আলম হৃদয় আজকের পত্রিকাকে বলেন, তামান্না সেতু নিজেই টাকা দিয়ে বইটি ছাপান। প্রতিটি বই ১১০ টাকা দরে ছাপানো হয়। তাঁরা কিনে নেন। তাঁর স্বামী সুজাউর রহমান ও এক কাজিন বইটি ছাপাতে টাকা দিয়েছিলেন।
পরে বইগুলো কারাগারের কর্মীরা নিয়ে যান। দেশের কারাগারগুলোতে তামান্না সেতুর এই বই কেনার কথা জেলার ও জেল সুপাররা নিশ্চিত করেছেন। গাজীপুর জেলা কারাগার ও কাশিমপুর কারাগারের সাবেক দুজন জেল সুপার আজকের পত্রিকাকে বলেন, গত ফেব্রুয়ারি, মার্চ ও এপ্রিলে তাঁদের কারাগারগুলোতে এই বই কেনার নির্দেশ আসে। একজন স্টেনো অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক শেখ সুজাউর রহমানের বরাত দিয়ে এ বই কেনার জন্য ফোন দেন। পরে বইটি ৫০, ২০ ও ১০ কপি করে কারাগারগুলো কিনতে বাধ্য হয়।
ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগারের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিআইজির কার্যালয় থেকে বইগুলো কিনতে বলা হয়েছিল। স্যারকে খুশি করতে অনেকেই বইটি কারা লাইব্রেরিতে রেখেছেন।
বইয়ের বিষয়ে জানতে চেয়ে তামান্না সেতুকে ফোন দিলে তিনি রিসিভ করে কেটে দেন। তবে তাঁর স্বামী অতিরিক্ত কারা মহাপরিদর্শক সুজাউর রহমানকে ফোন দিলে তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘বইটি যখন প্রকাশিত হয়, তখন আমাদের কারা কর্মকর্তারা আগ্রহ নিয়ে বললেন, তাঁরা কারা লাইব্রেরি বা কারা বুক কর্নারে রাখতে চান। তাঁরাই বইটি নিয়েছেন। এখানে কাউকে জোর করা বা বাধ্য করা হয়নি।’
তবে এই বই বন্দীদের জন্য কোনো কাজে আসবে না বলে জানিয়েছে দীর্ঘদিন ধরে কারাগারের বন্দীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করা প্রতিষ্ঠান ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশন। প্রতিষ্ঠানটি কারা অধিদপ্তরকে বন্দীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নের জন্য কারা লাইব্রেরিতে কিছু বই রাখার পরামর্শ দিয়েছিল। একটি মডেলও তারা করে দিয়েছিল। তবে সেই পরামর্শে শিশুতোষ কোনো বইয়ের কথা বলা হয়নি।
বন্দীদের মানসিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে এই বই উপযুক্ত নয় বলে জানিয়েছেন ঢাকা আহ্ছানিয়া মিশনের পরিচালক (স্বাস্থ্য) ইকবাল মাসুদ। তিনি বলেন, কারাগারে বন্দীদের মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে ভাবা হয় না। বন্দীদের কাউন্সেলিংয়ের পাশাপাশি নির্বাচিত বই দেওয়া উচিত, যাঁতে তাঁদের রাগ নিয়ন্ত্রণসহ মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির দক্ষতা অর্জন হয়। এই বইয়ে সে উপাদান নেই।