রংপুর চিড়িয়াখানায় আছে একটি মাত্র উটপাখি। স্ত্রী পাখিটি নিয়মিত ডিম দিলেও পুরুষ সঙ্গীর অভাবে ডিমগুলো ফুটে বাচ্চা হয় না। কর্তৃপক্ষ বংশ বৃদ্ধির জন্য একটি পুরুষ পাখি চেয়ে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ ঢাকা চিড়িয়াখানায় আবেদন করেছে।
নিঃসঙ্গ স্ত্রী উটপাখিটি ইতিমধ্যে ১০টির মতো ডিম দিয়েছে। সর্বশেষ গত শনিবার প্রায় দেড় কেজি ওজনের একটি ডিম পাওয়া যায়। তবে বাচ্চা না ফোটা এসব ডিম ভেঙে শুধু খোসা সংরক্ষণে রাখছে চিড়িয়াখানা কর্তৃপক্ষ।
চিড়িয়াখানা সূত্রে জানা গেছে, প্রায় সোয়া ৩ বছর আগে ঢাকা চিড়িয়াখানা থেকে একটি পুরুষ এবং একটি স্ত্রী উটপাখি আনা হয়। পুরুষ সঙ্গীটি দুই বছর আগে মারা যায়। তখন থেকে বিষণ্ন মনে খাঁচায় একা দিন কাটছে স্ত্রী পাখিটির।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, উটপাখির বংশ বিস্তারের জন্য দ্রুত একটি পুরুষ সঙ্গী আনা প্রয়োজন। জোড়া থাকলে এত দিনে খাঁচায় পাখির সংখ্যা আরও বেড়ে যেত। এখন ডিমগুলো ফোটানোর জন্য পুরুষ পাখির দরকার। অন্যথায় ডিম দেওয়া শুধু স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষিত হবে।
রংপুর বিনোদন উদ্যান ও চিড়িয়াখানার জু অফিসার এইচ এম শাহাদাৎ শাহিন জানান, ২০১৯ সালের মার্চে ঢাকা থেকে বাচ্চা উটপাখিটি আনা হয়। পাখিটি এখন পর্যন্ত ১০ থেকে ১২টি ডিম দিয়েছে। একেকটি ডিমের ওজন প্রায় দেড় কেজি।
শাহাদাৎ শাহিন বলেন, ‘বাংলাদেশের আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় মরুভূমির জাহাজ খ্যাত এই পাখির বংশবৃদ্ধি হতে কোনো সমস্যা নেই। তবে এখানে পুরুষ উটপাখির অভাবে ডিম থেকে বংশ বৃদ্ধিতে আমরা নতুন কোনো সফলতা দেখতে পারছি না। যদি পুরুষ পাখির ব্যবস্থা করা যায়, তাহলে এটা নতুন সম্ভাবনার দুয়ার খুলে দেবে। নয়তো ডিমগুলো স্মৃতি হিসেবে সংরক্ষণ করা ছাড়া উপায় নেই।’
এ বিষয়ে চিড়িয়াখানার ডেপুটি কিউরেটর মো. আমবার আলী তালুকদার জানান, গত বছরের মার্চ থেকে উটপাখিটি ডিম দেওয়া শুরু করেছে। কিন্তু পুরুষ পাখি না থাকার কারণে ডিমগুলো ফার্টাইল (ফুটানো) করা সম্ভব হচ্ছে না। প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরসহ ঢাকা চিড়িয়াখানাতেও একটি পুরুষ পাখির জন্য আবেদন করা হয়েছে।
আমবার আলী আরও জানান, উটপাখিটির মতো পাখিগুলো আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ায় সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। একেকটা ১৫০ কেজি ওজনের হয়। এরা উড়তে অক্ষম। তবে খুব দ্রুতগামী ও দৌড়ে পারদর্শী। ঘণ্টায় প্রায় ৭০ কিলোমিটার পর্যন্ত দৌড়াতে পারে। এরাই একমাত্র প্রাণী যাদের পায়ে দুটি মাত্র আঙুল রয়েছে। এরা দলবদ্ধ জীব। পাঁচ থেকে ৫০ সদস্যের যাযাবর দলে এরা ঘুরে বেড়ায়।
আমবার আলী আরও বলেন, চিড়িয়াখানায় উটপাখিকে দৈনিক এক থেকে দেড় কেজি পোলট্রি ফিড, কলা, শাক, পাউরুটি, গম ও ভিটামিন প্রিমিক্স খাওয়ানো হয়। অঞ্চল ভেদে এদের প্রজনন ক্ষেত্রে কিছুটা ভিন্নতা রয়েছে। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে একটি পুরুষ উটপাখি তার নিজস্ব এলাকা দখল করে ফেলে এবং তার সঙ্গে দুই থেকে সাতটি স্ত্রী উটপাখি থাকে। ডিম ফুটে ৩৫ থেকে ৪৫ দিন পর বাচ্চা বের হয়। এরা দুই থেকে চার বছর বয়সে বয়োপ্রাপ্ত হয়। বেঁচে থাকে ৩৫ থেকে ৪৫ বছর।
প্রয়াত রাষ্ট্রপতি হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের শাসনামলে নগরীর হনুমানতলা এলাকায় ১৯৮৯ সালে রংপুর চিড়িয়াখানা গড়ে ওঠে। এটি দর্শনার্থীদের জন্য ১৯৯২ সালে খুলে দেওয়া হয়। প্রায় ২১ একর জমির ওপর প্রতিষ্ঠিত চিড়িয়াখানাটিতে ৩৩ প্রজাতির ২৫১টি প্রাণী রয়েছে। এর মধ্যে সিংহ, বাঘ, জলহস্তী, হরিণ, অজগর সাপ, ইমু, উটপাখি, বানর, কেশওয়ারি, গাধা, ঘোড়া, ভালুক উল্লেখযোগ্য।