কেশবপুরের বিদ্যানন্দকাটি ইউনিয়নের ভান্ডারখোলা গ্রামের কৃষক আজিজুর রহমান (৬২)। প্রায় ২৫ বছর ধরে ভান্ডারখোলা গ্রামের বেলেমাঠে তিনি আখ চাষ করে আসছেন। ওই খেতেই আখমাড়াই করে রস সংগ্রহ এবং সেই রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করেন। খেত থেকেই পাইকারি ক্রেতারা গুড় কিনে নিয়ে যান।
আজিজুর রহমান আখ চাষে করে দ্বিগুণ লাভবান হচ্ছেন গুড় তৈরি করে। তাঁর এই লাভ দেখে ওই এলাকার অনেক কৃষকই আখ চাষে ঝুঁকেছেন।
উপজেলার ভান্ডারখোলা গ্রামের বেলেমাঠে গিয়ে দেখা যায়, কৃষক আজিজুর রহমান ও তাঁর ছেলে হাফিজুর রহমান খেতের মধ্যেই চুলা তৈরি করে আখের শুকনো ছোবড়া দিয়ে টিনের বড় পাত্রে (তাফাল) রস জ্বাল দিয়ে গুড় তৈরি করছেন।
এ সময় আজিজুর রহমানের সঙ্গে কথা হ। তিনি বলেন, ‘প্রায় ২৫ বছর ধরে আখ চাষ করে আসছি। এবার ২০ শতক জমিতে আখ চাষ করেছি। আখ কাটার পর খেতেই মাড়াই করার মেশিন ভাড়া করে এনে রস বের করা হয়। পরে ছাঁকনি দিয়ে ভালোভাবে ছেঁকে রস টিনের পাত্রে (তাফাল) রাখা হয়। এ ছাড়া আখের ছোবড়া খেতে শুকিয়ে ওই জ্বালানি দিয়েই রস জ্বাল দিয়ে তৈরি করা হয় গুড়।’
আজিজুর রহমান বলেন, ‘খেতের পরিচর্যাসহ আখের গুটি লাগানো থেকে গুড় তৈরি করা পর্যন্ত প্রতি শতকে দেড় হাজার টাকা খরচ হয়। প্রতি শতকে আখের গুড় উৎপাদন হয় প্রায় ৫০ কেজি। বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারি ক্রেতারা এসে প্রতি কেজি গুড় ১১০ টাকায় খেত থেকেই কিনে নিয়ে যান। উৎপাদন খরচ বাদ দিয়ে প্রতি শতকে প্রায় ৪ হাজার টাকা লাভ থাকে।’
আজিজুর রহমানের দেখাদেখি ওই গ্রামের কৃষক আব্দুস সামাদ মোড়ল ১৪ শতক, জাকির উদ্দিন ১৬ শতক, লেয়াকত আলী ২৪ শতক, হায়দার আলী ১৬ শতক, ইব্রাহিম হোসেন ২২ শতক জমিতে আখ চাষ করেছেন।
তাঁরা ছাড়া উপজেলায় আরও অনেকই এ বছর আখ চাষ করে ছেন। সেসব চাষিরা লাভবান হওয়ার আশা করছেন।
এ বিষয়ে কৃষক আব্দুস সামাদ মোড়ল বলেন, ‘আজিজুর আখ চাষ করে সংসারে সচ্ছলতা এনেছেন। তাঁর থেকে পরার্মশ নিয়ে আমিও এবার ১৪ শতক জমিতে আখ রোপণ করেছি। এখন পর্যন্ত তেমন কোনো রোগ-বালাই নেই। আশা করছি আঁখের ভালো ফলন হবে।’
ভান্ডারখোলা গ্রামের শিক্ষার্থী আল মাসুদ তুহিন বলেন, ‘আমি মাঠে গিয়ে কৃষকের কাছ থেকে পাইকারি গুড় কিনে অনলাইনের মাধ্যমে সারা দেশে চাহিদা অনুযায়ী পাঠিয়ে থাকি। এখানকার উৎপাদিত খাঁটি গুড়ের বেশ চাহিদা রয়েছে।’
কেশবপুর উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা মনির হোসেন বলেন, ‘উপজেলার ভান্ডারখোলা গ্রামের বেলেমাঠে প্রায় ২ হেক্টর জমিতে কৃষকেরা গুড় তৈরির জন্য আখ লাগিয়েছেন। এ ছাড়া খাওয়ার জন্য এ উপজেলায় প্রায় ২৫ হেক্টর জমিতে আখ চাষ করা হয়েছে। আখচাষিদের কৃষি কার্যালয় থেকে বিভিন্ন সময়ে পরামর্শ দেওয়া হয়। তাঁরা বেশ লাভবান হচ্ছেন।’
কর্মকর্তা মনির হোসেন আরও বলেন, ‘অনেক আগে থেকেই এ উপজেলা আঁখ চাষের জন্য বিখ্যাত। উপজেলায় আখ চাষ বাড়াতে নানা পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছে। আশা করছি এসব পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে এ উপজেলার আখ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলেও রপ্তানি করা সম্ভব হবে।’