ফুলবাড়ী (কুড়িগ্রাম) প্রতিনিধি
কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ীতে বাড়ির আঙিনা ও গাছের সঙ্গে চাষ হচ্ছে ভেষজ ও মসলাজাতীয় উদ্ভিদ চুই ঝাল। এতে অনেকে সচ্ছল হচ্ছেন।
কৃষি কার্যালয় ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, কোনো গাছের গোড়া থেকে একটু দূরে গর্ত করে চারা বা কাটিং লাগিয়ে চুইগাছের চাষ করা যায়। মাটিতে কিংবা অন্য গাছের সঙ্গে লতার মতো বেড়ে ওঠে চুইঝাল। এর পাতা, কাণ্ড ও শিকড় ওষধি গুণসম্পন্ন। স্বাদে অতুলনীয় এই মসলা মাংসের পাশাপাশি মাছের তরকারিতে ব্যবহার করা যায়।
বরিশাল, খুলনা, নোয়াখালী ও যশোরে বিভিন্ন অনুষ্ঠানের খাবারে চুই ঝালের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। দেশের গণ্ডি পেরিয়ে এখন চুই গুঁড়া বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এ কারণে ফুলবাড়ীতে চুই চাষ বাড়ছে।
উপজেলার নাওডাঙ্গা ইউনিয়নের কুরুষাফেরুষা গ্ৰামের কৃষক জহির আলী ও তাঁর স্ত্রী ময়নামতি জানান, তাঁরা বাড়ির উঠানের আমগাছসহ সুপারি বাগানের ২৮টি গাছে চুই চাষ করেছেন। এর মধ্যে ১১টি সুপারি গাছের চুই চুরি হয়ে গেছে। তিন দিন আগে তিন বছর বয়সী ১৭টি সুপারির গাছে চুই ঝালের গাছ ৩৫ হাজার টাকা বিক্রি করেছেন।
উপজেলার চওড়াবাড়ি গ্ৰামের কৃষক জামাল মিয়া ও হোসেন আলী জানান, তাঁরা একই দিনে কাঁঠালবাড়ী এলাকার চুই পাইকার জামাল মিয়ার কাছে তিনটি চুই ঝাল ২৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
পূর্বফুলমতি ফকিরপাড়া গ্ৰামের কৃষক হোসেন আলী জানান, তিনি গত মাসে একটি করে শিমুল, আম ও কাঁঠালগাছের চুই ৬০ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন।
চুই কিনতে আসা লালমনিরহাট সদরের ভাটিবাড়ি বাজারের ব্যবসায়ী মজনু মিয়া ও কুড়িগ্রামের উলিপুর উপজেলার পাইকার মোজাম্মেল হক বলেন, ‘পাঁচ বছর আগে ফুলবাড়ীতে চুইয়ের চাষ কম ছিল। বর্তমানে চাহিদা বাড়ায় উৎপাদন বেড়েছে। আমরা ১৫ থেকে ২০ বছর ধরে চুই ঝালের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। ভালো মানের চুই ১২ থেকে ১৩ হাজার, মাঝারি ৮ থেকে ১০ হাজার টাকায় কিনি। পরে এগুলো বোঝা বেঁধে খুলনা ও যশোরের বাসের ছাদের মাধ্যমে মহাজনের কাছে পাঠাই। এতে প্রতি মাসে ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা আয় হয়।’
ফুলবাড়ী উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিলুফা ইয়াছমিন বলেন, ‘দক্ষিণাঞ্চলে চুই ঝালের ব্যবহার বাড়ছে। এ কারণে উত্তরাঞ্চলের মধ্যে ফুলবাড়ীতে চুই ঝালের চাষ দিনদিন বাড়ছে। আমরা কৃষি বিভাগ থেকে প্রতিনিয়ত চুই ঝাল চাষে কৃষকদের উৎসাহিত এবং প্রযুক্তিগত সহায়তা প্রদান করছি।’