এই তো দিন দশেক আগের ঘটনা। মিরপুরে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের (ডিপিএল) ম্যাচে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের বিপক্ষে শর্ট ফাইন লেগে ফিল্ডিং করার সময় হঠাৎ লুটিয়ে পড়েন তানভীর ইসলাম। আবাহনী লিমিটেডের ২৫ বছর বয়সী স্পিনারকে সঙ্গে সঙ্গে নেওয়া হয় বাউন্ডারি লাইনের বাইরে।
প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উঠে দাঁড়ালেও ওই ম্যাচে আর খেলা হয়নি তানভীরের। তিনি যখন মাঠ ছেড়ে বেরিয়ে যান, মিরপুরের তাপমাত্রা তখন ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছুঁয়েছে। খেলা চলার সময় তানভীরের এভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ার কারণ কী? আবাহনীর ফিজিও এনামুল হক তখন জানান, তীব্র গরম সহ্য করতে না পেরে এমনটা হয়েছে। পানিশূন্যতায় পেশিতেও টান ধরেছে। এ ধরনের ঘটনা অবশ্য ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নতুন নয়। প্রতিবছর তীব্র গরমে খেলোয়াড়দের অসুস্থ হয়ে পড়ার ঘটনা আকছার ঘটে।
আর গরমে খেলোয়াড়দের লুটিয়ে পড়াটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা হিসেবে দেখারও সুযোগ নেই। বৈশ্বিক উষ্ণতা তথা জলবায়ু পরিবর্তন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে বাংলাদেশসহ পুরো উপমহাদেশে, যা এই অঞ্চলের ক্রীড়াবিদদের শরীরে ভয়াবহ প্রভাব ফেলছে। প্রভাবশালী ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ‘দ্য গার্ডিয়ান’ তাদের সাপ্তাহিক সংবাদ-সংকলনে এ আশঙ্কার কথা জানিয়েছে।
গত মার্চ থেকে দক্ষিণ এশিয়ার ওপর দিয়ে তীব্র দাবদাহ বয়ে যাচ্ছে। এর মধ্যেই দিব্যি চলছে ক্রিকেট-ফুটবলসহ সব ক্রীড়া ইভেন্ট। প্রতিকূল আবহাওয়া খেলোয়াড়দের কাবু করে ফেললেও এ নিয়ে ভ্রুক্ষেপ নেই কোনো সংস্থার।
অথচ যুক্তরাষ্ট্রের স্পোর্টস মেডিসিন কলেজ উপমহাদেশের তাপের চাপ পরিমাপ করে সরাসরি সূর্যের আলোয় খেলা নিয়ে ভয়ংকর তথ্য দিয়েছে। তাদের দাবি, দিনের আলোয় মানবদেহ অধিক ঘামলে চাঙা হতে সময় লাগে। ২৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসের ওপরে খেলা বা একটানা শরীরচর্চা করা ঝুঁকিপূর্ণ। এতে করে হিটস্ট্রোকের শঙ্কা বাড়ে। আর ৩৫ ডিগ্রির বেশি তাপমাত্রা খেলোয়াড়দের জন্য প্রাণঘাতী হতে পারে।
ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগে (আইপিএল) এবার রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরুকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন ফাফ ডু প্লেসি। বিরূপ পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘শরীরে যাতে পানির ঘাটতি না থাকে, সেটা নিশ্চিত করা জরুরি।’ বেঙ্গালুরুর পেসার হার্শাল প্যাটেলও জানিয়েছেন, এ ধরনের কন্ডিশনে শক্তি সঞ্চয় করা ছাড়া উপায় নেই। কদিন আগে আজকের পত্রিকাকে মোস্তাফিজুর রহমান জানিয়েছিলেন, তিনি দিনের ম্যাচ নিয়ে বেশি চিন্তিত থাকেন। কারণটা অবশ্যই তীব্র গরম।
আইপিএলের মতো বেশির ভাগ ক্রিকেট ম্যাচ হয় ফ্লাডলাইটের আলোয়। রাতে তাপমাত্রাও কিছুটা সহনীয় পর্যায়ে থাকে। কিন্তু অন্য খেলোয়াড়দের সে সুযোগ নেই। প্রখর রোদেই মাঠে নেমে যেতে হচ্ছে তাঁদের।
বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ (বিপিএল) ফুটবলের কথাই ধরা যাক। দুপুর গড়াতেই শুরু হচ্ছে খেলা। কলকাতায় এএফসি কাপের গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশের চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসেরও দুটি ম্যাচ ছিল ভরদুপুরে, ভ্যাপসা গরমে। এমন সূচি দেখে বিস্মিত হয়েছিলেন সবাই। বসুন্ধরার আবেদনের পর অবশ্য সূচি পাল্টেছে এএফসি।
বৈশ্বিক উষ্ণতার প্রভাব থেকে ক্রীড়াঙ্গনকে মুক্ত রাখতে খেলোয়াড়দেরই এগিয়ে আসতে হবে বলে মনে করেন বিজ্ঞানবিষয়ক সাংবাদিক দিশা শেঠি। বিশেষ করে ক্রিকেটারদের। কারণ, উপমহাদেশে ক্রিকেটারদেরই জনপ্রিয়তা বেশি। তাঁদের কণ্ঠস্বরও দ্রুত সরকার অবধি পৌঁছায়, ‘ভারতে ক্রিকেটারদের প্রভাব বেশি, অনুসারীও অনেক। জলবায়ু পরিবর্তন ও পরিবেশ বিপর্যয় নিয়ে ক্রিকেটারদের আলোচনায় বসা উচিত। তাঁরা সমস্যার সমাধানে বড় ভূমিকা রাখতে পারেন।’
২০১৯ সালে জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকারক দিকটি আইসিসির কাছে তুলে ধরা হয়েছিল। ক্ষতির হাত থেকে খেলোয়াড়দের বাঁচাতে উপমহাদেশের দলগুলোকে আর্থিক সহযোগিতা দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছিল। এ নিয়ে তহবিলও গঠন করার কথা ছিল। তিন বছর পেরিয়ে গেলেও বিশ্ব ক্রিকেটের নিয়ন্ত্রক সংস্থার প্রতিশ্রুতি পূরণে কোনো অগ্রগতি নেই।