খান রফিক, বরিশাল
বরিশাল বিভাগে ঠান্ডার কারণে শিশুরা আশঙ্কাজনক হারে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হচ্ছে। বিভাগের ছয় জেলার হাসপাতালগুলোতে এক মাসে প্রায় ৩ হাজার শিশুকে এ রোগ নিয়ে ভর্তি করা হয়েছে। এর মধ্যে বরিশাল শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালেই রয়েছে অর্ধেক রোগী।
শেবাচিম হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ড ঘুরে দেখা গেছে, শয্যার চেয়ে শিশু রোগীর সংখ্যা তিন-চার গুণ বেশি। একটি শয্যায় দুটি করে শিশুকে রাখা হয়েছে। সেই সঙ্গে মেঝেতে গাদাগাদি করে রাখা হয়েছে আক্রান্তদের। তাদের অধিকাংশই নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত। সেখানে চিকিৎসক আর নার্সের সংকট তীব্র।
একাধিক শিশুর অভিভাবক অভিযোগ করেন, শিশুদের চিকিৎসায় মানসম্মত সেবা এখানে দেওয়া হচ্ছে না। কেননা, চিকিৎসক আর নার্সের সংখ্যা অপ্রতুল। তাই কোনোরকমে সন্তানের সুস্থ হয়ে ওঠাই এখন বড় কথা। এখানে নেবুলাইজার ও মাস্ক জরুরি। কিন্তু এটি নিয়ে কাড়াকাড়ি হয় বলে জানান অভিভাবকেরা।
হাসপাতালের পরিচালক সাইফুল ইসলাম জানান, গতকাল রোববার শিশু ওয়ার্ডে তিন শর মতো রোগী ছিল। এর মধ্যে নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত ছিল ৫০ থেকে ৭০টি। এক মাস ধরে গড়ে দৈনিক ৫০টির বেশি শিশু নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। তিনি শিশুদের রক্ষায় অভিভাবকদের সতর্ক হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন।
এদিকে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালকের কার্যালয়ের গতকালের তথ্যমতে, এক মাসে বিভাগের ছয় জেলার (শেবাচিম হাসপাতাল ব্যতীত) হাসপাতালগুলোতে ১ হাজার ৫০১ জন নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী ভর্তি হয়েছে। এর মধ্যে মৃত্যু হয়েছে দুজনের। জেলা হিসেবে বরিশালের বিভিন্ন হাসপাতালে (শেবাচিম হাসপাতাল ব্যতীত) রোগী রয়েছে ৪৭৫ জন। বিভাগের মধ্যে সবচেয়ে বেশি, ৭৩৮ জন রোগী পাওয়া গেছে ভোলায়। অধিদপ্তরের পরিসংখ্যানবিদ এ এস এম আহসান কবির এ তথ্য জানিয়েছেন।
বরিশাল সাউথ অ্যাপোলো মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ জাবির হাসান জানান, সাম্প্রতিক সময়ে হাসপাতালে যেসব শিশু আসছে, তাদের সিংহভাগই নিউমোনিয়ায় ভুগছে। এটি অবশ্যই চিন্তার বিষয়। এ ক্ষেত্রে পরিবারকে সচেতন হতে হবে। শিশুদের গরমে রাখতে হবে। হাত ধুতে হবে। রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বৃদ্ধি করতে ফলসহ পুষ্টিকর খাবার খেতে হবে প্রচুর। তিনি শিশুদের নিউমোনিয়ার টিকা দেওয়ার ওপরও জোর দেন।
এ ব্যাপারে কথা হলে বরিশাল বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের পরিচালক শ্যামল কৃষ্ণ মণ্ডল আজকের পত্রিকাকে বলেন, শেবাচিম হাসপাতাল বিভাগীয় শহরে, তাই রোগী বেশি। এখানে বিশেষজ্ঞও বেশি। তবে মাঠপর্যায়ে এত নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত রোগী নেই।