বিশেষ ধরনের মাশরুমের চা পান করে করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করা সম্ভব বলে দাবি করেছেন একজন গবেষক। তিনি হলেন ড. মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। বাড়ি ঢাকার ধামরাই উপজেলার চাপিল গ্রামে। তিনি ছত্রাক তত্ত্ববিদ ও মাশরুম গবেষক এবং উদ্যোক্তা।
মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন মাশরুম বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি অর্জন করেছেন। বাড়িতেই গড়ে তুলেছেন মাশরুমের গবেষণাগার। শুধু তাই নয়, তাঁর গ্রামে করোনার উপসর্গ থাকা একাধিক বয়স্ক রোগীকে এই মাশরুমের চা পান করিয়ে সফলতাও পেয়েছেন।
করোনা বিস্তার রোধে উপকারী মাশরুমটির বৈজ্ঞানিক নাম গ্যানোডার্মা লুসিডাম। এর নির্যাস ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া ও ভাইরাসের বংশবৃদ্ধি রোধ করার ক্ষমতা রাখে। এ দেশে একে ঋষি মাশরুম নামে চেনেন অনেকে। মেহগনি, আম, জাম, কাঁঠাল, একাশিয়া ও বাঁশের গোঁড়ার দিকে এই মাশরুম জন্মাতে দেখা যায়। এগুলো গাছের ওপর পরজীবী হিসেবে জন্মায়। এই মাশরুম শুকিয়ে তা গরম পানিতে জ্বাল দিয়ে চায়ের মতো পান করা যায়।
ড. আনোয়ার তাঁর এলাকার ১১ জন বয়স্ক রোগীকে এই গ্যানোডার্মা লুসিডাম মাশরুমের চা পান করিয়ে করোনাসহ বিভিন্ন রোগ থেকে সুস্থ করেছেন। তাঁদের মধ্যে ওই এলাকার আব্দুস সালাম ও আব্দুল রশিদের করোনা পজিটিভ ছিল এবং আজিমউদ্দিন ও মো. মোক্তার আলীর করোনার সব ধরনের উপসর্গ ছিল। সাত থেকে ১০ দিন গ্যানোডার্মা লুসিডাম মাশরুমের চা পান করার পরই তাঁরা সুস্থ হয়ে ওঠেন।
জানতে চাইলে আব্দুস সালাম আজকের পত্রিকা কে বলেন, ‘আমার করোনার উপসর্গ দেখা দিলে পরীক্ষা করি। পরে জানতে পারি আমার করোনা হয়েছে। এ রকম কথা শুনে প্রথমে চিন্তায় পড়ে যাই। হোমকোয়ারেন্টিনে থেকে ডাক্তারের পরামর্শ মতো কাজ করি। কিন্তু আমার শরীরের কোনো উন্নতি হচ্ছিল না। পরে আমার ভাতিজা আনোয়ার হোসেন আমার কথা শুনে আমাকে প্রতিদিন মাশরুমের চা পান করাত, আর বলত কাকা কোনো চিন্তা কইরেন না। কয়েক দিন এই চা পান করার পর করোনাসহ ঠান্ডা-কাশি, জ্বরসহ সব চলে যাবে। ঠিক তাই হয়েছে। সাত-আট দিন এই চা পান করার পর আমি সুস্থ হয়ে উঠি। আগের থেকে এখন খুব ভালো আছি।’
এ বিষয়ে মাশরুম গবেষক ড. আনোয়ার বলেন, প্রায় দুই হাজার বছর আগে চীনে এই মাশরুমের ব্যবহার শুরু হয়। তারপর সারা বিশ্বে এটি গবেষণার বিষয় হিসেবে ছড়িয়ে পড়ে। গ্যানোডার্মা লুসিডাম মূলত মাশরুমটির বৈজ্ঞানিক নাম। চীন-জাপানে এটি লিংঝি এবং রেইসি মাশরুম বলে পরিচিত। বিভিন্ন জটিল রোগে প্রাকৃতিক সুরক্ষার জন্য সারা বিশ্বে এর ব্যবহার দিন-দিন বাড়ছে। তিনি বলেন, ‘আমরা করোনা থেকে মুক্ত হতে টিকার পেছনে ছুটলেও এর উৎপত্তিস্থল চীন ও প্রতিবেশী দেশে গ্যানোডার্মা মাশরুমের ব্যবহার যেমন বেড়েছে, তেমনি বেড়েছে করোনা রোগীর ওপর এর প্রায়োগিক গবেষণা। আমেরিকা, যুক্তরাজ্য, চীন, জাপান, হংকং, ভারত, পাকিস্তান, ইরাক, ইরান, এমনকি আফ্রিকার নাইজেরিয়াতেও এর ওপর গবেষণা হয়েছে।’
কীভাবে মাশরুমটি করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধ করে এমন প্রশ্নে ড. আনোয়ার বলেন, গ্যানোডার্মা মাশরুমের নির্যাস অস্থি মজ্জায় আরএনএ এবং ডি এনএর সংশ্লেষ বাড়ায়, যাতে বেশি-বেশি লিম্ফোসাইট তৈরি হয়। এ কারণে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধি পায়। করোনাভাইরাস শরীরে প্রচুর প্রো-ইনফ্ল্যামেটরি সাইটোকাইনিন তৈরি করে যা মালটি-অর্গান ফেইলিউরের জন্য দায়ী।
পক্ষান্তরে গ্যানোডার্মা মাশরুমের নির্যাসে থাকা পলিস্যাকারাইড ও ট্রাইটারপেনয়েড সাইটোকাইনিনের ক্ষতিকর প্রকোপ থেকে মানবদেহকে রক্ষা করে। ভাইরাসের প্রোটিন-কোট সংশ্লেষে বাধা দিয়ে ভাইরাসের বংশ বৃদ্ধি রোধ করে। এভাবে গ্যানোডার্মা মাশরুম করোনাজনিত মৃত্যু ও হস্পিটালাইজেশন কমায়।
এ বিষয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মাইক্রোবায়োলজি বিভাগের অধ্যাপক ও জীবাণু বিশেষজ্ঞ ড. আলী আজম তালুকদার বলেন, আর মাশরুমের কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া নেই। করোনা প্রতিরোধে টিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। টিকার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা এবং মাশরুম চা পান করা যেতে পারে।