লালমনিরহাটে তিস্তা নদীর পানি কমতে শুরু করায় দৃশ্যমান হচ্ছে তলিয়ে যাওয়া ফসলের খেত, রাস্তাঘাট ও ঘরবাড়ি। এতে অনেক এলাকায় খেতের ফসল নষ্ট হওয়ার পাশাপাশি রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে।
ভারতের উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও বৃষ্টির কারণে লালমনিরহাটের হাতীবান্ধায় অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের ডালিয়া পয়েন্টে নদীর পানি কমে গতকাল শুক্রবার বিকেল ৫টায় বিপৎসীমার ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়। তথ্যটি নিশ্চিত করেন ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের গেজ রিডার নুরল ইসলাম।
তিস্তা ব্যারাজের ভাটিতে থাকা হাতীবান্ধা, কালীগঞ্জ, আদিতমারী ও সদর উপজেলার ১৪টি ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলে পানিবন্দী রয়েছে ২০ হাজার পরিবার। তিস্তার পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় হাতীবান্ধা উপজেলার দোয়ানীতে অবস্থিত তিস্তা ব্যারাজের ৪৪টি জলকপাট খুলে দিয়ে পানি নিয়ন্ত্রণ করছে ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ড।
এদিকে পানি বাড়ার ফলে ব্যারাজের ফ্লাড বাইপাস সড়কটির ১৫০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় লালমনিরহাটের বড়খাতা হয়ে তিস্তা ব্যারাজের ওপর দিয়ে নীলফামারীর সঙ্গে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া গত বুধবার সন্ধ্যায় পানির তোড়ে গঙ্গাচড়া শেখ হাসিনা সেতুর কাকিনা-রংপুর সড়কের মিলনবাজার নামক স্থানে রাস্তার প্রায় ১৫০ মিটার ভেঙে যাওয়ায় ওই সড়ক দিয়েও যান চলাচল বন্ধ রয়েছে।
আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ইউনিয়নের মহিষখোঁচা-স্পারবাঁধ সড়কের তিনটি অংশে ভেঙে যাওয়ায় যান চলাচল বন্ধ রয়েছে। এ ছাড়া জেলার বাকি চারটি উপজেলার গ্রামীণ সড়ক, সেতু ও কালভার্টের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে।
ব্যারাজের ভাটিতে থাকা হাতীবান্ধার সানিয়াজান, গড্ডিমারী, সির্ন্দুনা, ডাউয়াবাড়ি, পাটিকাপাড়া, সিঙ্গিমারী, কালীগঞ্জ উপজেলার ভোটমারী, তুষভান্ডার, কাকিনা, আদিতমারী উপজেলার মহিষখোঁচা ও সদর উপজেলার রাজপুর, খুনিয়াগাছ ও গোকুন্ডা ইউনিয়নের নদীর তীরবর্তী নিম্নাঞ্চলগুলোর সবচেয়ে বেশি ক্ষতি হয়েছে।
এসব এলাকার মানুষ বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের সংকটে পড়েছে। এ ছাড়া তিস্তা ব্যারাজের উজানে থাকা পাটগ্রামের দহগ্রাম ইউনিয়নেরও বেশ কয়েকটি গ্রাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। আকস্মিক এ বন্যার কবলে পড়ে নষ্ট হয়েছে উঠতি আমন, ভুট্টা, বাদাম, আগাম জাতের আলুসহ বিভিন্ন ফসলের খেত।
জেলায় ১৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্যার কবলে পড়ায় এসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ রয়েছে। বিদ্যুতের খুঁটি ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় হাতীবান্ধা ও পাটগ্রাম উপজেলায় বুধবার সকাল থেকে বৃহস্পতিবার বেলা ৩টা পর্যন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ বন্ধ থাকে। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে ২৫ ঘণ্টা পর কিছু এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহ শুরু হয়।
ডালিয়া পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) নির্বাহী প্রকৌশলী আসফাউ দৌলা জানান, বর্তমানে তিস্তার পানি বিপৎসীমার ৪০ থেকে ৬০ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এখন আর কোনো আতঙ্ক নেই বলেও জানান তিনি।
লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মো. আবু জাফর বলেন, বানভাসি মানুষের জন্য ইতিমধ্যেই ১৭০ মেট্রিক টন চাল ও নগদ ৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া শুকনা খাবার ও পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট বিতরণ করা হচ্ছে বলেও জানান তিনি।