‘আমি তো কম্পিউটারের কিছু বুঝি না। দোকানদাররে কইছি, সে ফরম পূরণ করে দিছিল। চারটা আবেদন করে দিছে। ছেলে লটারিতে টিকছে। ভর্তির টাকাও জমা দিছি। এখন স্কুলের স্যাররা কইতেছে, ভর্তি হবে না।’ ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির ডিজিটাল লটারিতে নির্বাচিত হলেও এখন ভর্তি করাতে না পারায় কথাগুলো বলেন কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার এক অভিভাবক।
পেশায় হোটেল ব্যবসায়ী ওই অভিভাবকের ছেলে চলতি বছর ডিজিটাল লটারিতে কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তির জন্য মেধাতালিকায় স্থান পায়। কিন্তু একই পছন্দক্রমে একাধিক আবেদন করায় তার ভর্তির সুযোগ বাতিল করেছে কর্তৃপক্ষ।
শুধু এই অভিভাবকের সন্তান নয়, এ বছর লটারিতে মেধাতালিকায় স্থান পাওয়া কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি-ইচ্ছুক ৩৪ শিশু শিক্ষার্থীর ভর্তির সিদ্ধান্ত বাতিল ঘোষণা করেছে বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। এই সংখ্যা আরও বাড়তে পারে বলে জানা গেছে।
এর আগে ১৯ ডিসেম্বর মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক (মাধ্যমিক-১) দুর্গা রানী সিকদার স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বলা হয়, ‘কোনো আবেদনকারী তথ্য পরিবর্তন করে একাধিক আবেদন করলে ডিজিটাল লটারিতে তার ভর্তির নির্বাচন বাতিল বলে গণ্য হবে।’
নির্বাচিত হওয়ার পরও ভর্তির সুযোগবঞ্চিত ভুক্তভোগী শিশুদের অভিভাবকেরা বলছেন, সফটওয়্যারেই একাধিক আবেদনের সুযোগ রাখা হয়েছে। বিগত বছরগুলোতে একই পদ্ধতিতে একাধিক আবেদন করে অনেক শিক্ষার্থী লটারির মাধ্যমে ভর্তি হয়েছিল। ভর্তির আবেদনের সরকারি সফটওয়্যারে একাধিক আবেদনের সুযোগ না রাখলে কেউ এটা করতে পারতেন না। লটারির আগে এসব আবেদন বাতিল করে ফল ঘোষণা করলে এই পরিস্থিতি তৈরি হতো না। নির্বাচিত হওয়ার পর শিশুরা খুশি হয়ে পরিচিতদের সঙ্গে আনন্দ ভাগাভাগি করেছে।অনেকে স্কুলের পোশাকও তৈরি করেছে। এর মধ্যে ভর্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করায় শিশুদের মনের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
জেলা সদরের পুরোনো শহরের একাধিক অভিভাবক বলেন, ‘আবেদন তো আমাদের সন্তানেরা করেনি। আমরা বিভিন্ন কম্পিউটারের দোকান থেকে আবেদন করেছি। দোকানদারেরাই একাধিক আবেদন করার ব্যবস্থা করেছেন। আমরা এসব কৌশল জানিও না। এটা ভুল হয়ে থাকলে লটারির আগেই বাছাই করে বাদ দিতে পারত। এখন লটারি করে নির্বাচিত হওয়ার পর এভাবে ভর্তির সিদ্ধান্ত বাতিল করায় সন্তানদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল।’
কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষক বলেন, ‘লটারির মাধ্যমে ভর্তির আবেদনের সিস্টেমের বলি হচ্ছে এই শিশুরা।সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ এর দায় এড়াতে পারে না। এখানে এই শিশুশিক্ষার্থীদের অপরাধ কোথায়?’
কুড়িগ্রাম সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জিয়াসমিন আরা হক বলেন, ‘সরকারি নির্দেশনার বাইরে আমাদের কিছুই করার নেই।’