সূর্যের আলো ফুটতে না ফুটতেই কৃষকেরা বাঙ্গি তোলায় ব্যস্ত। সকাল সকাল সেই বাঙ্গি নেবেন হাটে। একটু দেরি হলেই অপেক্ষা করতে হবে বিকেলের জন্য। এ চিত্র ঢাকার নবাবগঞ্জের কৈলাইল ইউনিয়নের বাঙ্গির গ্রাম খ্যাত ভাঙ্গাভিটার। আর গ্রামের মেঠো পথ ধরে হাঁটলেই ভেসে আসে বাঙ্গির ম-ম ঘ্রাণ।
ঢাকা-নবাবগঞ্জ সড়কের পাশে মরিচা ঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত ট্রলারে বা নৌকায় যাওয়া যায় ভাঙ্গাভিটার বাঙ্গির হাটে। তবে নবাবগঞ্জ উপজেলার পাড়াগ্রাম-কৈলাইল সড়কপথেও যাওয়া যায়। গতকাল শুক্রবার ভোরে বাঙ্গির গ্রামে গিয়ে দেখা যায় সকালের হাট ধরতে কৃষক ও পাইকারদের তোড়জোড়। সূর্য ওঠার আগেই কৃষক খেত থেকে বাঙ্গি তুলে ঝাঁকা বা টুপরিতে রাখছেন। সেগুলো নৌকায় তুলে নিচ্ছেন ভাঙ্গাভিটার বাঙ্গির হাটে। হাটে দূরদূরান্ত থেকে আসা পাইকার ও খুচরা বিক্রেতারা কম দামে ভালো বাঙ্গি কেনার চেষ্টা করছেন।
মৌসুমের শুরুতে এক টুপরি বাঙ্গির দাম হাজারের ওপরে ছিল। তবে মাঝে কিছুটা কমলেও রমজানকে কেন্দ্র করে বর্তমানে ৮০০ থেকে ১ হাজার ৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্রতি টুপরিতে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৮-২৪টি বাঙ্গি থাকে।
স্থানীয় বাসিন্দাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁদের এলাকার বাঙ্গির সুনাম রয়েছে সারা দেশে। শুধু এই ফলকে কেন্দ্র করে এ মৌসুমে ভাঙ্গাভিটা ইছামতীর তীরে প্রতিদিন সকাল-বিকেল বসে হাট।
বাঙ্গিচাষি ভেবল মণ্ডল বলেন, প্রতিবছর বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরপরই জমিতে বপন করা হয় বাঙ্গিবীজ। একটি বাঙ্গিগাছ বড় হতে সময় লাগে চার-পাঁচ মাস। চাষিরা পুরো চৈত্র মাস বাঙ্গি তুলতে পারেন। বাকি সময় এই জমিতে আমন ধানের আবাদ করেন। তবে বাঙ্গির মৌসুম এলে এলাকায় উৎসবের আমেজ বিরাজ করে।
নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থেকে আসা পাইকার মোহাম্মদ আলী বলেন, রমজানে রোজাদারদের ইফতারে বাঙ্গির চাহিদা থাকায় বেশি দামে বাঙ্গি কিনতে হচ্ছে। সিজনে যে বাঙ্গির টুপরি ১ হাজার ২০০ ছিল, মাঝে তা ৫০০-৮০০ টাকায় বিক্রি হতো, এখন হাজারের ওপরে কিনতে হচ্ছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নাহিদুজ্জামান বলেন, এ বছর ১০২ হেক্টর জমিতে বাঙ্গি চাষের লক্ষ্যমাত্রা থাকলেও চাষ হয়েছে ১১৫ হেক্টর জমিতে। ভালো দাম পাওয়ায় এ বছর কৃষকের মুখে হাসি ফুটবে।