গাজী মমিন, ফরিদগঞ্জ (চাঁদপুর)
চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জ নৌপথে কচুরিপানায় নৌযান চলাচল করতে পারছে না। ফলে ব্যবসায়ীরা পড়েছেন বিপাকে। এদিকে দখল আর দূষণে আশপাশের পরিবেশ বিষিয়ে উঠেছে।
চাঁদপুর জেলা শহর থেকে ফরিদগঞ্জ উপজেলা সদর নৌপথের দূরত্ব প্রায় ১৮ কিলোমিটার। পুরো নৌপথটি ডাকাতিয়া নদী ও সিআইপি বেড়িবাঁধের ভেতরের অংশে পড়েছে। অতিরিক্ত কচুরিপানার কারণে নৌপথটি বন্ধ হয়ে গেছে। নদীতে কচুরিপানার কারণে কোথাও পানি দেখা যায় না।
স্থানীয় মো. জহির মাঝি, খালেক মাঝি, মালেক মাঝি, হারুন মাঝি, শাহজাহান মাঝিসহ কয়েকজন জানান, শতাধিক নৌকা এ পথে চলাচল করলেও কচুরিপানার কারণে এখন তাঁরা নৌকা চালানো বন্ধ করে দিতে বাধ্য হয়েছেন। তাই এখন আর পাল তোলা নৌকার দৃষ্টিনন্দন দৃশ্য ডাকাতিয়া নদীতে মিলছে না। তা ছাড়া ঢাকা-ফরিদগঞ্জ লঞ্চ যোগাযোগও দীর্ঘ সময় চালু ছিল। নৌপথটি পুনরুদ্ধার হলে চাঁদপুর-ফরিদগঞ্জে লঞ্চ যাতায়াতের সুযোগ পেত এ অঞ্চলের মানুষ।
নৌযানে পণ্য সংগ্রহকারী সিরাজবালী, সাইফুল ইসলাম, আবুল কালামসহ কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, স্থলপথে মালামাল বহন ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল; অন্যদিকে নৌপথে অনেক কম খরচ ও ঝুঁকিমুক্তভাবে বহন করা যায়। ডাকাতিয়া নদীর কচুরিপানা অপসারণ করে নৌপথ পুনরুদ্ধার ও পরিবেশ দূষণের হাত থেকে নদীটি রক্ষা করা প্রয়োজন।
এদিকে জেলে পরিবারগুলোর কথা বিবেচনা করে সরকার প্রতি বছর ডাকাতিয়া নদীতে মাছের পোনা অবমুক্ত করছে। কচুরিপানা পচে পানি নষ্ট হয়ে মাছ মরে যাচ্ছে। প্রতিবছর পানি নষ্ট হয়ে বোয়াল, পাবদা, ট্যাংরা, পুঁটি, শোল, মলা, রুই, মৃগেলসহ দেশীয় প্রজাতির মাছ মরে যাচ্ছে। ফলে জেলে পরিবারগুলো পড়েছে বিপদে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, নদীর ফরিদগঞ্জ অংশের বেশ কিছু অংশ দখল ও দূষণের কবলে পড়ে অস্তিত্ব হারাতে বসেছে। উপজেলা সদরের বাজারের উত্তর অংশে কেরোয়া সেতুর দুই পাশে ময়লা-আবর্জনা ফেলে বিশাল অংশ ভরাট করেছে দখলদারেরা। টুবগী এলাকায় অনুমোদনহীন একটি ব্রিকস ফিল্ডের আবর্জনায় নদীর পানি দূষিত হচ্ছে। নতুনভাবে নদীর বিভিন্ন অংশে যে যার মতো দখল করছে।
উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা ফারহানা আক্তার রুমা বলেন, কচুরিপানা অপসারণের জন্য বড় ধরনের প্রকল্প নিয়ে নদীটি দূষণমুক্ত করে জেলে পরিবারগুলোকে টিকিয়ে রাখার ব্যবস্থা নেওয়া দরকার। তবে বরাদ্দ পেলে সমস্যার সমাধান করা যাবে।
জেলা প্রশাসক ও জেলা নদী রক্ষা কমিটির সভাপতি মো. কামরুল হাসান বলেন, ডাকাতিয়া নদীর কচুরিপানা অপসারণে উদ্যোগ নিতে জেলা মৎস্য অফিস ও নৌ-পুলিশকে ইতিমধ্যে জানানো হয়েছে। নদীটি এভাবে পড়ে থাকলে ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যেই অস্তিত্ব হারাবে। তিনি পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ে বরাদ্দ চেয়ে চিঠি পাঠাবেন। বরাদ্দ পেলে নদীটি নৌচলাচলের উপযোগী করা সম্ভব হবে।