নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম
চট্টগ্রামে পাহাড়ধসে চারজনের মৃত্যুর পর পূর্ব ফিরোজশাহ কলোনির ১ নম্বর ঝিল এলাকায় পাহাড়ে ঝুঁকিপূর্ণভাবে বসবাসকারীদের উচ্ছেদ করেছে জেলা প্রশাসন। গতকাল রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে র্যাব, পুলিশ ও আনসারের সমন্বয়ে অভিযান শুরু হয়। বিকেল পর্যন্ত চলা এ অভিযানে শতাধিক বসতঘর উচ্ছেদ করা হয়।
অভিযানের একপর্যায়ে বেলা ২টার দিকে সেখানে যান জেলা প্রশাসক (ডিসি) মোহাম্মদ মমিনুর রহমান। তিনি এ সময় সাংবাদিকদের বলেন, ‘পাহাড়ে অবৈধ ও ঝুঁকিপূর্ণ যেসব স্থাপনা উচ্ছেদ করা হচ্ছে, সেখানে পুনরায় কেউ দখলে নিয়ে যেন স্থাপনা নির্মাণ করতে না পারে সে জন্য আমরা কাঁটাতারের বেড়া ও গাছ লাগিয়ে দেব।’
কেউ কাঁটাতারের সেই সীমানা ভেঙে বসতি গড়ে তুলতে চাইলে তাঁদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান জেলা প্রশাসক।
চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের জ্যেষ্ঠ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট তৌহিদুল ইসলামের সমন্বয়ে কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) উমর ফারুক, চান্দগাঁও সার্কেলের সহকারী কমিশনার মাসুদ রানা ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আল আমিন সরকার অভিযানে অংশ নেন। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মনীষা মহাজনের সমন্বয়ে মেয়রের একান্ত সচিব মুহাম্মদ আবুল হাশেমও অভিযানের সময় ছিলেন। অভিযানে নগর পুলিশের ৫০ জন পুরুষ ও ২০ জন নারী সদস্য, র্যাবের ২টি দল, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের একটি দল, স্থানীয় কাউন্সিলর ও আনসার সদস্যরা সহযোগিতা করেন।
উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে অনেকেই ঘর-বাড়ি রেখে জিনিসপত্র নিয়ে চলে যেতে শুরু করেন। কেউ কেউ বসতঘর উচ্ছেদ না করার অনুরোধ জানান। প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত মা নুরজাহান বেগমকে নিয়ে পাহাড়ের পাদদেশে ছোট্ট একটি বসতঘরে থাকতেন জানে আলম। বসতঘর উচ্ছেদ শুরু হলে মাকে নিয়ে বেশ বিপাকে পড়েন তিনি। প্রায় অসাড় মাকে কাঁধের ওপর তুলে নিয়ে ঘর ছাড়তে ছাড়তে জানে আলম বলেন, ‘তিন ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী আর মাকে নিয়ে এ ছোট্ট ঘরে থাকতাম। মা ৫ বছর ধরে প্যারালাইসিস রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরে পড়ে আছেন। তাঁর জ্ঞান–শক্তিও নেই। ঘরেই সবকিছু করতেন। দিনমজুরে কাজ করে যা পাই তা দিয়েই বড় কষ্টে চলছিল সংসার। এখন ঘর থেকে বের করে দিল প্রশাসন। আমি পরিবার নিয়ে এখন কোথায় যাব?’
ঘর হারানো অন্যরাও প্রায় একই কথা বলেন। তাঁরা তাঁদের অন্য কোথাও যাতে স্থায়ীভাবে পুনর্বাসন করা হয় সেই দাবি জানান। কেউ কেউ বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যদি অন্য দেশের হয়েও এখানে ঘরবাড়ি পায়। আমরা কেন দেশের নাগরিক হয়ে পাব না।’
অভিযানে অংশ নেওয়া চট্টগ্রাম নগরের কাট্টলী সার্কেলের সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ওমর ফারুক বলেন, ‘পাহাড়ের এই জায়গাটা রেলওয়ের জায়গা। ঝুঁকি নিয়ে থাকা বাসিন্দাদের আগে থেকেই সরে যেতে বলা হয়েছে। এরপরও তারা এখান থেকে তাদের মালামাল সরিয়ে নেয়নি। সে জন্য বাধ্য হয়ে আমরা উচ্ছেদ করছি। যতগুলো অবৈধ স্থাপনা রয়েছে সবগুলোর বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হয়েছে।’