যশোরে চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ১৯ হাজার ৭২৮ মেট্রিক টন, তবে সংগ্রহ করা হয়েছে মাত্র ৩ হাজার ১২৪ মেট্রিক টন। বাজারদরের চেয়ে সরকারিভাবে ধানের মূল্য কম নির্ধারণসহ বিভিন্ন কারণে কৃষকেরা ধান বিক্রি করতে রাজি হননি। যে কারণে চলতি মৌসুমে সরকারিভাবে ধান সংগ্রহ অভিযান সফল হয়নি।
অন্যদিকে চাল সংগ্রহের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ২৭ হাজার ৭৫৫ মেট্রিক টন, সেখানে সংগ্রহ করা হয়েছে ২৪ হাজার ৯৫৬ মেট্রিক টন। গত ২৮ এপ্রিল শুরু হয়ে ৩১ আগস্ট পর্যন্ত চলে এ ধান-চাল সংগ্রহ অভিযান।
জেলা খাদ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জেলার আটটি উপজেলার মধ্যে সদর, চৌগাছা, ঝিকরগাছা, শার্শা ও কেশবপুর উপজেলায় কৃষি অ্যাপের মাধ্যমে এবং অভয়নগর, মনিরামপুর ও বাঘারপাড়া উপজেলায় ‘আগে আসলে আগে পাবেন’ ভিত্তিতে ধান কেনা হয়। এ সময়ে জেলার হাটবাজারে মোটা ধান ৯৯০ থেকে ১ হাজার টাকা এবং চিকন ধান ১ হাজার ১৮০ থেকে ১ হাজার ২৫০ টাকা মণ দরে বিক্রি হয়েছে।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর যশোর কার্যালয় সূত্র জানায়, কৃষকের একটি করে কৃষি কার্ড আছে। ওই কার্ডে কৃষকের নাম, পরিচয় ও চাষ করা জমির পরিমাণ উল্লেখ রয়েছে। জেলায় কার্ডধারী কৃষকের ব্যাংকে ১০ টাকার হিসাব রয়েছে। ধান কেনার পর কৃষকের ব্যাংক হিসাবে টাকা দেওয়া হয়। কৃষক ব্যাংক হিসাব থেকে টাকা তোলেন।
যশোরের বাঘারপাড়া উপজেলার ধলগ্রামের গ্রামের কৃষক রফিকুল বিশ্বাস এবার ৫ বিঘা (৫২ শতকে বিঘা) জমিতে জিরা এবং রড-৩ ধান চাষ করে দেড় শ মণ ধান পেয়েছেন। নিজেদের খাওয়ার ৫০ মণ রেখে বাকি ১০০ মণ ধান তিনি ১ হাজার ২০০ টাকা দরে বিক্রি করেছেন।
রফিকুল বিশ্বাস বলেন, ‘এবার সরকারি দামের চেয়ে বাজারে ধানের দাম বেশি। সরকারি গুদামে ধান দেওয়া অনেক ঝামেলার। আর্দ্রতার কথা বলে অনেক সময় ধান ফেরত দেওয়া হয়। এতে সমস্যায় পড়তে হয়। কিন্তু স্থানীয় বাজারে এসব ঝামেলা নেই। এ জন্য সব ধান বাজারে বিক্রি করে দিয়েছি।’
ঝিকরগাছা উপজেলার মাটি কুমড়া গ্রামের কৃষক গোলাম মোস্তফা পাঁচ বিঘা জমিতে ধানের আবাদ করেন। খাওয়ার জন্য রেখে প্রায় ৯০ মণ ধান তিনি খোলাবাজারে বিক্রি করেছেন। তিনিও সরকারি গুদামে ধান বিক্রি করতে চান না। কারণ, সেখানে বেশ ঝামেলায় পড়তে হয়। বাজারে ধান বিক্রি করে সঙ্গে সঙ্গে টাকা পাওয়া যায়। এ জন্য বাজারে সব ধান বিক্রি করেছেন।
জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের দপ্তর সূত্র জানায়, চলতি ধান-চাল সংগ্রহ মৌসুমে যশোরে চাল সরবরাহের জন্য ২৫০ জন চালকলের মালিক চুক্তিবদ্ধ হন। চাল ৪০ টাকা ও ধান ২৭ টাকা কেজি দরে কেনা হয়েছে।
যশোর জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক নিত্যানন্দ কুণ্ডু বলেন, ‘কৃষক স্থানীয় বাজারে ধান বিক্রি করার কারণে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হয়নি। এতে তাঁদের পরিবহন ব্যয়, শ্রম ও সময় কম লাগে। তবে চুক্তিবদ্ধ চালকলের মালিকেরা ঠিকমতো চাল সরবরাহ না করায় চাল সংগ্রহ কিছুটা কম হয়েছে। যারা কম দিয়েছে, তাদের আমরা ব্যাখ্যা চেয়ে চিঠি দেব।’