শিপুল ইসলাম, তারাগঞ্জ
পবিত্র রমজান মাস শুরু হচ্ছে আগামী সপ্তাহের প্রথম দিকে। এ সময় ইফতারের পর ক্লান্তি দূর করতে তৈরি করা হয় লেবুর শরবত। কিন্তু তারাগঞ্জে রোজাকে কেন্দ্র করে এর দাম বেড়ে গেছে তিন গুণ। প্রতিটি লেবু এখন ১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।
গতকাল বুধবার উপজেলার বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, ১৫ দিন আগেও প্রতিটি লেবু যেখানে তিন থেকে চার টাকায় বিক্রি হয়েছে, তা এখন বিক্রি হচ্ছে ৯ থেকে ১০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির কারণ হিসেবে সরবরাহ কম ও বেশি দামে আড়ত থেকে কেনার কথা বলছেন।
গতকাল বেলা ২টার দিকে ইকরচালী হাটে সবজি কেনা শেষে বিক্রেতাকে এক হালি লেবু দিতে বলেন দোলাপাড়া গ্রামের বাবু মিয়া। কিন্তু দাম ৪০ টাকা চাওয়ায় তা ফেরত দিয়ে দেন তিনি।
বাবু বলেন, ‘এখনো রোজা আইসে নাই। তাতে লেবুর হালি ৪০ টাকা। রোজা শুরু হইলে কী হইবে তাহলে কন? অন্য জিনিসের যে দাম, এবার রোজার মাসোত মনে হয় লেবু পানিও খাওয়া হইবে না। রোজা আসলে সউগ দেশে জিনিসের দাম কমে আর হামার দেশে খালি বাড়ি।’
বাজারের সবজি ব্যবসায়ী মোক্তার মিয়া বলেন, ‘এখন লেবুর মৌসুম না। বাজারে লেবু কম থাকায় দাম বেশি। বেশি দামে কিনে তো লোকসান করে বিক্রি করতে পারি না। ওই জন্য খুব কম লেবু রেখেছি।’
বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে তারাগঞ্জ সবজি বাজারে কথা হয় দৌলতপুর গ্রামের নজরুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘কেমন করি বাঁচা যায় কন! সামান্য আনা লেবু, তারও দাম দেখেন ১৫ দিনোতে ৭ টাকা বাড়িল। রমজানোত লেবু পানি দিয়া রোজা ভাঙি। এবার মনে হয় সেটা হবার নেয়। রোজা আইসলে ব্যবসায়ীর ঈদ নাগে। সউগ জিনিসের দাম বাড়ায়।’
তবে লেবু বিক্রি করে তেমন লাভ হয় না বলে দাবি করেন বাজারের খুচরা সবজি বিক্রেতা এমদাদুল হক। তিনি বলেন, ‘ক্রেতার সুবিধার জন্য রাখা। যে দামে আড়ত থেকে কিনি, পথের খরচ তুলে বিক্রি করে দেই। দাম বেশি হওয়ায় অতি প্রয়োজন ছাড়া আগের মতো কেউ লেবু কিনছেন না। লেবুর দামে ক্রেতারা অসন্তুষ্ট। আড়াতে কম দামে কিনতে পারলে, কম দামে বেচব।’
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ১৩ হেক্টর জমিতে লেবু জাতীয় ফসলের চাষ হয়েছে। প্রতিটি বাড়ির আনাচে-কানাচে ছাড়া এখানে বাণিজ্যিকভাবে তেমন লেবুর চাষ হয়নি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা নীল রতন দেব বলেন, ‘করোনার সময় মানুষ লেবুর পুষ্টিমান সম্পর্কে প্রচুর জেনেছে। প্রচণ্ড গরমে এক গ্লাস ঠান্ডা লেবুর শরবত দেহের জন্য খুবই উপকারী। এতে থাকা প্রচুর ভিটামিন সি রোগ প্রতিরোধে সাহায্য করে, স্কার্ভি রোগ থেকে রক্ষা করে, অ্যান্টি অক্সিডেন্টস হিসেবে কাজ করে। শিশুদের দৈনিক ২০ মিলিগ্রাম ভিটামিন সি আবশ্যক। প্রতিদিনের খাবারে লেবু রাখা উচিত।’
এ বিষয়ে উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা ঊর্মি তাবাসসুম বলেন, ‘লেবু উপকারী ও লাভজনক ফসল। আমরা বাণিজ্যিকভাবে লেবুর চাষ করার জন্য কৃষকদের উদ্বুদ্ধ করছি।’