মো. মফিজুর রহমান, ফরিদপুর
ফরিদপুরের চরভদ্রাসন উপজেলার সদর হাটে দীর্ঘদিন ধরে অতিরিক্ত খাজনা আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। ওই হাটে উপজেলার কৃষক স্থানীয় উৎপাদিত খাদ্যশস্যসহ বিভিন্ন মালামাল বিক্রি করতে গিয়ে সরকার নির্ধারিত খাজনার চেয়ে প্রায় চারগুণ বেশি টাকা দিচ্ছেন।
এতে আর্থিক ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন হাটের ক্রেতা-বিক্রেতারা। অতিরিক্ত খাজনা আদায়কারী কর্মীদের অসদাচরণের শিকার হয়ে হাটবিমুখ হচ্ছেন স্থানীয়রা।
অতিরিক্ত খাজনা আদায়ের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তানজিলা কবির ত্রপা ও উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোতালেব হোসেন মোল্যা গত শনিবার ওই হাটের বিভিন্ন বাজার পরিদর্শন করেছেন। তাঁরা ক্রেতা-বিক্রেতাদের সরকার নির্ধারিত হারের চেয়ে অতিরিক্ত খাজনা পরিশোধ করতে নিষেধ করেছেন এবং হাট ইজারাদারকে ডেকে নিয়ে সতর্ক করেছেন।
সরেজমিন জানা যায়, উপজেলা সদর হাটে প্রায় এক হাজার ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে। ঐতিহ্যবাহী ওই হাটে কোথাও খাজনার তালিকা প্রদর্শন করা হয়নি। হাটের মূল ইজারাদার প্রতিটি মালের বাজার পৃথকভাবে ইজারা দিয়েছেন। পৃথকভাবে ইজারা নেওয়া ব্যক্তিরা (সাবলিজ গ্রহীতারা) খাজনা আদায়ের জন্য বিভিন্ন লোক নিয়োগ দিয়েছেন।
তাঁরা সরকারি নীতিমালা না মেনে নিজেদের মনগড়া হারে খাজনা আদায় করেন।
ওই হাটের পেঁয়াজ, রসুন, আলু ও মরিচ বাজারে প্রতি কুইন্টাল সরকার নির্ধারিত ১৬ টাকার জায়গায় ৬০ টাকা এবং ধানের চারা বস্তাপ্রতি ১০ টাকার জায়গায় ৮০ টাকা আদায় করা হচ্ছে। বাজারে বরই বিক্রি করতে আসা প্রতিজনকে খাজনা দিতে হচ্ছে ১০০ টাকা, খেজুর গুড় বিক্রেতাকে দিতে হচ্ছে ১৫০, পশুহাটে মুরগিতে খাজনা শতকরা ১০, ছাগলে হাজারে ১০০, গরুতে হাজারে ৫০, ফুটপাতের দোকানে শুধু চট বিছানোর জন্য ২০ টাকা ছাড়াও পৃথকভাবে মালামালের খাজনা আদায় করা হচ্ছে।
এ ছাড়া ক্রেতা ও বিক্রেতা দুজনের কাছ থেকে আমদানি-রপ্তানি খাজনার অজুহাত দিয়ে প্রতিটি বিক্রীত পণ্যের বিপরীতে দুই দফায় খাজনা আদায় করা হচ্ছে। একই সঙ্গে হাটে মালামাল বহনকারী প্রতিটি গাড়ি থেকে ২০০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হচ্ছে বলেও ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করেন।
ওই হাটের ক্রেতা উপজেলার কে এম ডাঙ্গী গ্রামের কৃষক আ. আলী (৪২) বলেন, ‘দুই বস্তা ধানের চারা কিনে ১০০ টাকা খাজনা দিয়েছি। আবার যে কৃষক আমার কাছে চারা বিক্রি করেছেন, তাঁর কাছ থেকেও আরেক দফায় খাজনা রাখা হয়েছে।’
কানাইরটেক গ্রাম থেকে হাটে ১০ কেজি খেজুর গুড় নিয়ে বসা বৃদ্ধ সাধু সরকার (৭৫) বলেন, ‘গুড় নিয়ে দোকান পাতার সঙ্গে সঙ্গে হাটমালিকের লোকজন এসে ১৫০ টাকা খাজনা নিয়ে গেছে। প্রতিবাদ করলে অপমান অমু।’
বাজার বণিক সমিতির সভাপতি মো. আলমগীর হোসেন মোল্যা বলেন, ‘স্থানীয় হাটমালিকেরা প্রভাবশালী, অনেকই তাঁদের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে সাহস পান না বলে দীর্ঘদিন ধরে হাটে অতিরিক্ত খাজনা আদায়সহ গাড়িতে চাঁদাবাজি হচ্ছে।’
এ বিষয়ে হাটের ইজারাদার মো. আসলাম মোল্যা বলেন, ওই হাটে বিগত বছরগুলোতে যে হারে খাজনা আদায় করা হচ্ছিল, তিনি তার বেশি আদায় করেননি। তিনি হাট ইজারা নেওয়ার পর বিভিন্ন মালামালের হাট সাবলিজ দিয়েছেন, তাই অতিরিক্ত খাজনা আদায় বা গাড়িপ্রতি চাঁদা আদায়ের বিষয়গুলো তিনিই জানেন না।
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. মোতালেব হোসেন মোল্যা বলেন, ওই হাট ঘুরে ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাকে সরকার নির্ধারিত খাজনার অতিরিক্ত এক টাকাও
বেশি পরিশোধ করতে নিষেধ করা হয়েছে।
ইউএনও তানজিলা কবির ত্রপা বলেন, সর্বোচ্চ তিন দিনের মধ্যে ওই হাটে খাজনার তালিকা টানানোর নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আগামী হাট থেকে সরকার নির্ধারিত মূল্যের বাইরে খাজনা আদায় করা হলে ইজারা বাতিল করা হবে এবং গাড়িতে চাঁদাবাজিসহ কোনো অনিয়ম সহ্য করা হবে না; কঠোরভাবে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।