সাদ্দাম হোসেন, ঠাকুরগাঁও
মধ্যবয়সী শেফালী দাসের স্বামী রমেশ দাস মারা গেছেন আট বছর আগে। তাঁর ভিটেমাটিসহ কোনো সহায়-সম্বল নেই। দুই মেয়ের বিয়ে দিয়েছেন বেশ কয়েক বছর আগে। তাঁর কিশোর ছেলে নরসুন্দরের কাজ শিখছে। এখন তিনি একা, আয় নেই। পেট তো চালাতে হবে। তাই ফুটপাতে বসে মানুষের জুতা সেলাইয়ের কাজ করছেন শেফালী।
গত সোমবার সদর উপজেলার ভাউলার হাটে ফুটপাতে বসে জুতা সেলাই করতে দেখা গেছে শেফালীকে। এ সময় তিনি জানান, তাঁর স্বামী এই হাটে জুতা সেলাইয়ের কাজ করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে হতাশায় ডুবতে থাকেন শেফালী। পরে কোনো কাজ না পেয়ে স্বামীর পেশা বেছে নেন তিনি। শুরু হয় নতুন করে জীবনসংগ্রাম।
শেফালী বলেন, ‘নারী হয়ে ফুটপাতে বসে অন্যের জুতা মেরামত করি বলে অনেকে আমার কাছে আসেন না। তাই আমি কম টাকায় জুতা সেলাইয়ের কাজটি নিপুণভাবে করি দিই। রোদে পুড়ে, বৃষ্টিতে ভিজে আয় যা হয়, তা দিয়ে ঠিকমতো সংসার চলে না। বাজারের দিন আয় হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। বাজার না লাগলে রোজগার তেমন হয় না।’
শেফালী জানান, তাঁর যা আয় হয় তা দিয়েই চলে সংসার। অনেক সময় অনাহারে-অর্ধাহারে দিন কাটলেও তাঁর ভাগ্যে আজও জোটেনি বিধবা ভাতার কার্ড। মাথা গোঁজারও ঠাঁই নেই তাঁর। তাই অন্যের বাড়িতে ভাড়া থাকতে হয়।
স্থানীয় মুদি ব্যবসায়ী সাদেকুল আকন্দ বলেন, শেফালী দাস জুতা সেলাইয়ের কাজটি পুরুষ কারিগরের মতোই করেন।
বাজারের ব্যবসায়ী হামিদুল ইসলাম বলেন, সব ক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ থাকলেও মুচির কাজে তাদের খুব একটা দেখা যায় না।
সমাজে যারা শেফালীর মতো সংগ্রামী জীবনযাপন করছে, তাদের সাহায্যে বিত্তবানদের এগিয়ে আসা উচিত।
নারী উন্নয়নকর্মী খাদিজা বেগম বলেন, জীবনযুদ্ধে টিকে থাকার সামনে সব বাধা তুচ্ছ করতে যে মনোবলই যথেষ্ট, এর জীবন্ত প্রমাণ শেফালী।
সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু তাহের মো. সামসুজ্জামান বলেন, শেফালীর সম্পর্কে ভালোভাবে খোঁজ নিয়ে বিধবা ভাতাসহ তাঁর থাকার ঘরের ব্যবস্থা করা হবে।