নেই কোনো শিক্ষার্থী, আধা-পাকা তিনটি টিনের ঘর। ভেতরে আগাছা আর জঞ্জাল ছাড়া কিছু নেই। পাশে একটি খোলা টিনের চালা। অন্যদিকে আরেকটি টিনের ঘর, দেখলেই বোঝা যায় দীর্ঘদিন এটি খোলা হয়নি, কোনো সাইনবোর্ডও নেই। এই অবস্থা দিনাজপুরের চিরিরবন্দরের দক্ষিণ শুকদেবপুর নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়ের। ৬ জুলাই এমপিওভুক্তির তালিকায় ১১৫ নম্বরে নাম এসেছে প্রতিষ্ঠানটির। এতে বিস্মিত হন অনেকেই। তবে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ফজলে এলাহী আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘তাঁরা চেষ্টা করেছেন, কাগজপত্র সাবমিট করেছে, এমপি স্যারের ডিও লেটার ছিল, সর্বোপরি এটা মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্ত। এ ব্যাপারে আমাদের বলার কিছু নেই।’
সরেজমিন দেখা যায়, যেন কোনো একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ধ্বংসাবশেষ পড়ে রয়েছে। বিস্তীর্ণ খোলা মাঠে কয়েকটি গরু ঘাস খাচ্ছে। অনেক খুঁজেও প্রতিষ্ঠানের কোনো সাইনবোর্ড বা নামফলক চোখে পড়েনি। রাস্তার পশ্চিমে একটি খোলা টিনশেড, যেখানে এক পাশে দুটো খড়ের গাদা আর তার পাশেই পাশের বাড়ির কয়েকজন নারী দোলনায় একটি শিশুকে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছেন। তিনটি আধা পাকা টিনশেডের ঘর। বারান্দা একদিকে ভেঙে পড়েছে, ঘরের টিনগুলোর অবস্থা একই রকম।
ঘরের দরজায় উঁকি দিয়ে দেখা যায়, কোনো বেঞ্চ বা অন্য কোনো আসবাব নেই। পাশের দুটো রুমে তালা নেই। খোলা দরজা দিয়ে ভেতরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন পরিত্যক্ত থাকায় ঘরের মেঝেতে আগাছা জন্মেছে। এক কোণে দুটি টয়লেটের অস্তিত্ব থাকলেও আগাছায় ভেতরে যাওয়ার পথ বন্ধ। প্রতিষ্ঠানের কোনো শিক্ষক বা কর্মচারীকে খুঁজে পাওয়া যায়নি।
এলাকাবাসীর সহযোগিতায় স্কুলের সহকারী শিক্ষক পরিমল অধিকারী ও হাসান আলীর সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ১৯৯২ সালে উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি মরহুম আইয়ুবুর রহমান শাহ বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরুতে কয়েক শ শিক্ষার্থী পড়াশোনা করলেও দীর্ঘদিন এমপিওভুক্ত না হওয়ায় শিক্ষকদের মাঝে হতাশা বিরাজ করে। তাঁরা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত হলে একপর্যায়ে পাঠদান বন্ধ হয়ে যায়।
যদিও ওই দুই শিক্ষক বলছেন, করোনার আগে পর্যন্ত তাঁরা পাঠদান চালিয়েছেন। করোনার পর গত ছয় মাসে কোনো ক্লাস হয়নি। তবে এলাকাবাসী জানান, প্রায় এক যুগ ধরে বিদ্যালয়টি বন্ধ। তবে এমপিওভুক্ত হতে যাচ্ছে, এ রকম খবরে শিক্ষকেরা কিছুদিন থেকে তৎপর হলেও পাঠদান শুরু করতে পারেননি।
স্কুলের প্রধান শিক্ষক আফরোজা বেগম জানান, অনেক আশা নিয়ে তাঁরা বিদ্যালয়টি করেছিলেন। তাঁর মাত্র দেড় বছর চাকরি আছে। তথাপিও তিনি চান প্রতিষ্ঠানটি চালু হোক।