সম্পাদকীয়
আমেরিকান সাহিত্যের আগমন বর্তমান শতাব্দীর বিশ্বসাহিত্যের সবচেয়ে বড় ঘটনা। এর প্রথম প্রকাশ ঘটে ইংরেজি ভাষাভাষী রাষ্ট্রগুলোয়। এরপর ক্রমান্বয়ে তা ছড়িয়ে পড়ে লাতিন আমেরিকার দুটি প্রধান শাখা—স্প্যানিশ আমেরিকা ও ব্রাজিলে। খুব পৃথক হলেও এই তিন সাহিত্যধারার (আমেরিকা, স্প্যানিশ আমেরিকা, ব্রাজিল) একটি সাধারণ বৈশিষ্ট রয়েছে—তা হলো, সংঘাত। সেই সংঘাত যতটা না সাহিত্যগত, তার চেয়ে বেশি আদর্শের। দেহাতি ভাবধারার সঙ্গে কসমোপলিটন বোধের, ইউরোপীয়বাদের সঙ্গে আমেরিকান আত্মার। এই সংঘাতের উত্তরসূরি কী? কিছু সাধারণ মিল বাদ দিলে এই তিন সাহিত্যধারার পার্থক্য কিন্তু গভীর এবং বহুধা। সেই ফারাকের একটি অংশ, যতটা না সাহিত্যকেন্দ্রিক, তার চেয়ে বেশি ইতিহাসজনিত।
বিশ্বের বৃহৎ শক্তি হিসেবে আমেরিকার উত্থান এবং অ্যাংলো-আমেরিকান সাহিত্যের বিকাশের ঘটনা একে অন্যের সঙ্গে যুক্ত। যেমন আমাদের সাহিত্য আমাদের দেশের রাজনৈতিক এবং সামাজিক দুর্দশার সঙ্গে সংযুক্ত। এর ফলেই প্রমাণ হয় যে সামাজিক এবং ঐতিহাসিক বৈশিষ্ট্যগুলোর আগে থেকে কিছু নির্ধারণ করার ক্ষমতায় সীমাবদ্ধতা রয়েছে; বরং সাম্রাজ্যের পতন, সামাজিক অস্থিরতা অনেক সময় শিল্প-সাহিত্যের উত্থানের সঙ্গে এক হয়ে যায়। লি-পো এবং তু-ফু, তাং সাম্রাজ্যের পতন দেখেছিলেন। ভেলাসকোয়েজ ছবি আঁকতেন চতুর্থ ফিলিপের জন্য, লুকা ছিলেন নিরোর সমসাময়িক এবং নিরোর অত্যাচারের শিকার। অন্যান্য ফারাক বা বৈষম্য মূলত সাহিত্যগত, যা বিশেষ বিশেষ কাজের ক্ষেত্রে দৃশ্যমান, প্রতিটি সাহিত্য শাখার ক্ষেত্রে সার্বিকভাবে নয়।
এখানে একটি প্রশ্ন তৈরি হয়, সাহিত্যের কি নির্দিষ্ট চরিত্র রয়েছে? একেক ধরনের সাহিত্যের কি সাধারণ কিছু চরিত্রাবলি থাকে, যার দ্বারা তাকে অন্য ধারার সাহিত্যের সঙ্গে পৃথক বলে ধার্য করা যায়? আমার তাতে সন্দেহ রয়েছে। কোনো সাহিত্যকেই কিছু ভাসা-ভাসা, অবাস্তব চরিত্রবৈশিষ্ট্য দ্বারা সংজ্ঞায়িত করা যায় না। তা, বিরোধ এবং মিলনের দ্বন্দ্বে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অনন্য কিছু কাজের এক মহাসংঘ।
মেক্সিকান সাহিত্যিক অক্টাভিও পাজ ১৯৯০ সালে নোবেল পুরস্কার পান।