শাকিলা ববি, সিলেট
নদীর একপাশে ময়লা জমে ঠিক মাঝ বরাবর চলে এসেছে। দেখে মনে হবে ভাগাড়। আবার মাঝখানে ময়লার স্তূপ দেখে বিশাল চরের মতো মনে হয়। সিলেট নগরীর বুক চিড়ে বয়ে চলা এক সময়ের খরস্রোতা সুরমা নদীর এ অবস্থা। দখলদারদের কবলে পড়ে মরে গেছে এ নদী। পরিকল্পিতভাবে একে মেরে ফেলা হয়েছে বলে দাবি সচেতনমহলের।
আজ ১৪ মার্চ আন্তর্জাতিক নদীকৃত্য দিবস। সিলেট বিভাগের নদ-নদীকে দখল দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে ও নদী ধ্বংসের অপকর্ম বন্ধ করতে সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন পরিবেশবাদী সংগঠনের নেতারা।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা) তথ্য অনুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলায় প্রায় ১৩৪টি নদীর অস্তিত্ব রয়েছে। তবে শুষ্ক মৌসুমে ১০০টি নদী চিহ্নিত করা কঠিন হয়ে যায়। তারপরও ইউনিয়ন থেকে ইউনিয়নে, উপজেলা থেকে উপজেলায় এই নদীর নাম পাওয়া যায়, চিহ্ন দেখা যায়। সুরমা, কুশিয়ারা, খোয়াই, মনু, যাদুকাটা, ধলা, ধলাই, জুড়ি, বাসিয়া, বোকা, মাগুরা, সোনাই, সুতাং, নলজুড়সহ সিলেটের বিভিন্ন নদী এখন দূষণে বিপর্যস্ত। তীরের প্রায় প্রতিটি গঞ্জ-বাজারের আবর্জনার শেষ গন্তব্য হয় নদী। এই আবর্জনায় প্লাস্টিক বর্জ্যই বেশি।
সিলেট মহানগরীর ভেতর দিয়ে প্রবহমান আছে ২৬টি ছড়া বা খাল। ছড়া বা খালগুলো গিয়ে মেশে সুরমা নদীতে। এই ২৬টি ছড়া বা খালে প্রতিদিন ন্যূনতম ৫০ টন নাগরিক বর্জ্য ফেলা হয়। যা সুরমা নদীকে মারাত্মকভাবে দূষিত করছে। নাগরিক বর্জ্যে নদীর তল দেশ ভরাট হয়। এতে জলজ প্রাণের ক্ষতি হয় বলে জানান পরিবেশবিদেরা।
সিলেট পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, সিলেট সিটি করপোরেশন এলাকায় সুরমা নদীর ৪৫০ মিটার জায়গা ২৩ জন দখলদারের কবলে। তাঁরা নদীতীরবর্তী স্থানে ৭২টি স্থাপনা গড়ে তুলেছেন।
এ ব্যাপারে সুরমা রিভার ওয়াটারকিপার আবদুল করিম কিম বলেন, সুরমা-কুশিয়ারা বিধৌত শত নদীর সিলেট বিভাগে নদী ধ্বংসের অপকর্ম কোনোভাবেই বন্ধ হচ্ছে না। যার প্রভাবে আমাদের জীবন-জীবিকা, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য ও প্রাণ-প্রকৃতি বিপন্ন হচ্ছে। দখল, দূষণ ও ভরাটের কারণে সিলেটের অনেক নদী আজ মুমূর্ষু। এই নদীগুলো রক্ষা করা না গেলে সিলেটের অস্তিত্ব সংকট হবে।
তিনি আরও বলেন, ‘সিলেটের অধিকাংশ নদী প্রতিবেশী দেশ ভারতের মেঘালয় ও আসাম রাজ্য থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেছে। ভারত-বাংলাদেশের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত ৫৭টি আন্তসীমান্ত নদীর ১৭টি নদী সিলেট বিভাগের। বাংলাদেশমুখী এই নদীগুলোর অধিকাংশে ভারত সরকার বাঁধ ও ব্যারেজ নির্মাণ করেছে। আমাদের নদীগুলোতে প্রয়োজনের সময় পানির অপর্যাপ্ততায় হাহাকার লাগে। আবার অপ্রয়োজনের সময় অতিরিক্ত পানি প্রবাহে দুর্ভোগ বাড়ে।’
বাপার যুগ্ম সম্পাদক ছামির মাহমুদ বলেন, মেঘালয়ে পাহাড় কাটা ও সিলেটে টিলা নিধনে বর্ষায় ঢলের পানির সঙ্গে আসে প্রচুর বালি ও পাথর। যা নদীর তলদেশ ভরাট করে। সুরমার উৎসমুখ এই কারণেই ভরাট হয়ে আছে। শসুরমাকে বাঁচিয়ে রাখতে জকিগঞ্জের অমলসীদে সুরমার উৎসমুখ খনন করতে হবে।