২০১৭ সালের ২১ আগস্ট সবাইকে কাঁদিয়ে পরপারে পাড়ি দেন নায়করাজ রাজ্জাক। চলে গেছেন তিনি, কিন্তু রয়ে গেছেন অন্তরে। আজও সবার স্মৃতিতে অমলিন তিনি। এই প্রজন্মের অনেকেরই সৌভাগ্য হয়েছে তাঁর সঙ্গে কাজ করার। কেমন ছিল সেই অভিজ্ঞতা? স্মৃতির পাতা খুলে তাঁরা জানিয়েছেন সেই কথা। অনুলিখন বিশাল কুড়ি
—পূর্ণিমা
রাজ্জাক আঙ্কেলের সঙ্গে আলমগীর কুমকুম পরিচালিত ‘জীবন চাবি’ সিনেমায় প্রথম অভিনয় করি। এরপর তাঁর সঙ্গে ১৫-২০টি সিনেমায় অভিনয় করার সৌভাগ্য হয়েছে আমার। এমনকি তাঁর নিজের প্রযোজনা সংস্থা থেকে তাঁর পরিচালনায় ‘সন্তান যখন শত্রু’ ও ‘প্রেমের নাম বেদনা’ সিনেমাতেও অভিনয় করেছি। তিনি আমাকে নিজের মেয়ের মতোই স্নেহ করতেন। ভীষণ আদর করতেন। তিনি ছিলেন আমার চলচ্চিত্রের অভিভাবক। তাঁর সঙ্গে কাজ করার সুযোগ পাওয়াটা আমার চলচ্চিত্র জীবনের আশীর্বাদ।
—অপু বিশ্বাস
এফ আই মানিক পরিচালিত নায়িকা হিসেবে আমার প্রথম সিনেমা ‘কোটি টাকার কাবিন’-এ রাজ্জাক আঙ্কেলকে পেয়েছিলাম আমি। পরে সম্রাটকে নিয়ে যখন তিনি ‘আমি বাঁচতে চাই’ সিনেমাটি নির্মাণ করলেন, আমাকে নায়িকা করলেন। তখনই তাঁকে কাছ থেকে দেখার ও বোঝার সৌভাগ্য হয় বেশি। অনেকেই জানেন না, আমার একটি নাম আছে, ‘লক্ষ্মী’। রাজ্জাক আঙ্কেল জানতেন। এই নামের কারণেও তিনি আমাকে ভীষণ আদর করতেন। কারণ, আন্টির নামও লক্ষ্মী।
—বিদ্যা সিনহা মিম
আমার সৌভাগ্য, রাজ্জাক আঙ্কেলের নির্দেশনায় মহান মুক্তিযুদ্ধের গল্প নিয়ে একটি নাটকে অভিনয় করেছিলাম। মান্নান হীরা রচিত ‘আমি যুদ্ধে যাব’ নাটকটিতে আমার সহশিল্পী ছিলেন মামুনুর রশীদ স্যারসহ অনেকেই। রাজ্জাক আঙ্কেল আমাকে খুব স্নেহ করতেন। তিনি যখন পাশে এসে দাঁড়াতেন, কথা বলতেন, মনেই হতো না তিনি নায়করাজ। কারণ, তিনি তাঁর নিজের মেয়ের মতো আদর-ভালোবাসা দিয়ে কাজ বুঝিয়ে দিতেন। আমার অভিনয় জীবনের বড় প্রাপ্তি তাঁর নির্দেশনায় কাজ করতে পারা।
—অপূর্ব
নির্মাতা চয়নিকা চৌধুরীর ‘ধ্রুবতারা’ টেলিফিল্মে রাজ্জাক আঙ্কেলের সঙ্গে কাজ করার সৌভাগ্য হয়েছিল আমার। তাঁর মতো ভালোবাসা আর দরদ দিয়ে অভিনয় করতে কম শিল্পীকেই দেখেছি। তাঁর কাছ থেকে অভিনয়ের অনেক কিছু শিখেছি। আমার প্রথম সিনেমা ‘গ্যাংস্টার রিটার্নস’-এর মুক্তির আগেও লক্ষ্মীকুঞ্জে গিয়েছিলাম তাঁর দোয়া নিতে। তিনি অনেক খুশি হয়েছিলেন। আমার সঙ্গে অনেক বিষয় নিয়ে কথা বললেন, অনেক শুভকামনা জানালেন।
ছয়টি বছর হয়ে গেল মাথার ওপর থেকে গভীর মায়ার ছায়াটা সরে গেছে। এখনো বাড়িজুড়ে আব্বার শূন্যতা। আজ আব্বার ষষ্ঠ মৃত্যুবার্ষিকীতে পরিবারের পক্ষ থেকে থাকছে নানা আয়োজন। বছরের এই দিনে আমি ফজরের নামাজ পড়েই আব্বার কবরে চলে যাই, দোয়া-দুরুদ পড়ি। দুপুরে মেহমান, গরিব ও এতিমদের নিজ হাতে খাওয়াবেন আম্মা। উত্তরায় রাজলক্ষ্মী কমপ্লেক্সে আব্বার নিজের হাতে গড়া একটি মসজিদ আছে। আব্বা নিজে ইমাম নিযুক্ত করে গিয়েছিলেন। সেখানে বাদ আসর মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন করা হয়েছে। একই সময়ে বাসায়ও থাকছে মিলাদ ও দোয়ার আয়োজন। আমরা পরিবারের মানুষজন থাকব বাসায়। নামাজ শেষে আব্বার জন্য দোয়া করব সবাই।