শাহীন রহমান, পাবনা
প্রাচীন স্থাপত্যের নিদর্শন দেবিদ্বার উপজেলার নূর মানিকচর মসজিদ। পঞ্চদশ শতাব্দীর দিকে সৈয়দ নূর আহমেদ কাদেরী নামের একজন পীর এ মসজিদটি নির্মাণ করেন। তাঁর নামানুসারে ওই গ্রামের নামকরণ করা হয় নূর মানিকচর। তবে সংস্কারের অভাবে বর্তমানে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে মসজিদটি।
নূর মানিকচর মসজিদটির অবস্থান কুমিল্লা শহর থেকে ১৮ কিলোমিটার পশ্চিমে। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের দেবিদ্বার উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের নূর মানিকচর বাস স্টেশনের আধা কিলোমিটার উত্তরে এর অবস্থান। গতকাল রোববার সরেজমিনে এর বর্তমান দুর্দশার চিত্র দেখা যায়।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, আনুমানিক ৫০০ বছর আগের মসজিদটি উপজেলার সবচেয়ে পুরোনো এ মসজিদ। এ মসজিদটি ১০ ফুট দীর্ঘ ও ৫ ফুট চওড়া। ভেতরে একসঙ্গে ৪০-৫০ জন মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারেন। চুন-সুরকি দিয়ে নির্মিত মসজিদটির ভেতর অপরূপ কারুকাজে সজ্জিত। এর ছাদে রয়েছে ১১টি গম্বুজ। এর মধ্যে মূল ছাদে ৭টি, বাকি ৪টি গম্বুজ রয়েছে চারকোণায়।
কুমিল্লা জেলা প্রশাসকের ওয়েবসাইট থেকে মসজিদের প্রাচীন ইতিহাস জানা যায়। এই মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ নূর আহম্মেদ আল কাদেরীর কবরও মসজিদের পাশে। পঞ্চদশ শতাব্দীতে জুমার নামাজ পড়ার জন্য এ মসজিদটি নির্মাণ করেছিলেন তিনি।
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, মসজিদের প্রতিষ্ঠাতা সৈয়দ নূর আহম্মেদ আল কাদেরী একজন ধর্মপ্রাণ ও দানবীর ছিলেন। পীর হিসেবে তাঁর পরিচিতি ছিল। তিনি মসজিদ ছাড়াও ডাকঘর, মক্তব, পাঠশালা নির্মাণ ও একটি দিঘি খনন করেন। তাঁরা মসজিদটি রক্ষার সরকারিভাবে সংস্কারের পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানান।
মসজিদের পরিচালনা কমিটির সহ সভাপতি মো. সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘মসজিদটি ছোট হওয়ায় পেছনের দিক দিয়ে আলাদাভাবে বারান্দা নির্মাণের কাজ চলছে। পুরোনো এ মসজিদটি রক্ষার জন্য চেষ্টা করছি। তবে সরকারিভাবে কোনো অনুদান পেলে মসজিদটির রং, চুনা ও প্লাস্টার করা যেতো।’
মসজিদ কমিটির সভাপতি মো. মোর্শেদ আলম বলেন, সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে সব কটি গম্বুজই ধ্বংসের পথে। রং, চুনা ও প্লাস্টারে অভাবে মসজিদের বাইরের আস্তরগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। অধিকাংশ জায়গা থেকে আস্তরগুলো খসে পড়ে গেছে। বৃষ্টির পানিতে মসজিদের দেয়ালে শেওলা জমেছে। জানালার গ্রিলে মরিচা ধরেছে। দ্রুত এ মসজিদটি সংস্কার করা না হলে ৫০০ বছরের পুরানো এ স্থাপনাটি ধ্বংসের মুখে পড়ে বলে মনে করেন তিনি।