মানিকগঞ্জের ঘিওর উপজেলায় পাকিস্তানি হানাদার মুক্ত দিবস পালন হলো গতকাল। সকাল সাড়ে ১০টার সময় সব বীর মুক্তিযোদ্ধারা সমবেত হয়ে আনন্দ উল্লাস করেন। শত দুঃখকষ্ট ও আত্মত্যাগের পর বিজয়ের আনন্দঘন এক মুহূর্ত পালন করা হয় এ সময়।
ঘিওরের সব বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য এটি অত্যন্ত গৌরবের দিন। ১৯৭১ সালের এই দিনে দেশ মাতৃকার লড়াইয়ে নিয়োজিত অকুতোভয় বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবনবাজি রেখে পাকিস্তানি বাহিনীকে হটিয়ে ঘিওরকে শত্রুমুক্ত করেন। হানাদার বাহিনীর কবল থেকে মুক্ত হয় ঘিওর।
সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান ও তৎকালীন মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন খান জকি জানান, জেলায় ঘিওর ছিল একটি ঐতিহ্যবাহী ও গুরুত্বপূর্ণ এলাকা। ১১ ডিসেম্বর শতাধিক পাকিস্তানি সেনা উপজেলার নিলুয়া, শোলাকুড়া, ধূসর, পয়লা, নয়াবাড়ি ও মোল্লাবাড়ি এলাকা ঘিরে ফেলে।
কাক ডাকা ভোরে চার দিকে খবর ছড়িয়ে পড়ে। পাকিস্তানি বাহিনী এবং দেশীয় দোসর রাজাকার, আলশামশ ও শান্তি বাহিনীর সদস্যরা এলাকার অসংখ্য ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিয়ে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি সাধন করে। এমনকি এ বাহিনীর তাণ্ডবে এলাকার শত শত মানুষ ভয়ে জঙ্গলে পালিয়ে থাকেন। হানাদারদের অত্যাচার ও নির্যাতন থেকে রক্ষা পেতে দেশপ্রেমিক বীর মুক্তিযোদ্ধারা নিজের জীবন বাজি রেখে স্বাধীনতা আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়েন।
একপর্যায়ে ৭০-৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা একত্রিত হয়ে হানাদার বাহিনীদের আক্রমণ করেন। তাঁদের সঙ্গে ৬-৭ ঘণ্টা যুদ্ধ হয়। একপর্যায়ে প্রচণ্ড প্রতিরোধের মুখে হানাদার বাহিনী পিছু হটতে থাকে। পরে ঘিওরের মাইলাগী গ্রামের ভেতর দিয়ে বালিয়াখোড়া গ্রাম হয়ে তাঁরা সিংগাইর হয়ে পালিয়ে যায়। এ সময় তৎকালীন কমান্ডার প্রয়াত মনসুর আলম খান মারাত্মক আহত হন।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা ডেপুটি কমান্ডার কে এম সিদ্দিক আলী জানান, অসাম্প্রদায়িক দেশ গড়তে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাদে অন্য কোনো বিকল্প নেই। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিময় সেই রণাঙ্গনের বীরত্বগাথা স্মৃতিময় দিনগুলোর কথা মনে পরলে আজও শরীর শিহরে উঠে। এই দিনটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ শোভাযাত্রা, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরালে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও আলোচনা সভাসহ ব্যাপক কর্মসূচির আয়োজন করে।