বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মধ্যে নরসিংদীর পর এবার শেরপুর ও সাতক্ষীরা জেলা কারাগারে হামলা-অগ্নিসংযোগ ও লুটপাটের ঘটনা ঘটেছে। এ সময় কারাগারে থাকা এক হাজার ১২১ বন্দীর সবাই পালিয়ে গেছেন। গতকাল সোমবার এ ঘটনা ঘটে। এ ছাড়া সকাল থেকেই সরকারি-বেসরকারি অফিস-স্থাপনা, সংসদ সদস্য ও আওয়ামী লীগ নেতাদের বাসায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেছে দুর্বৃত্তরা।
শেরপুরের ঘটনায় প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত রোববার বিকেলে প্রশাসনের গাড়িচাপায় ও গুলিতে পাঁচজন নিহতের পর জেলা শহরের পরিস্থিতি উত্তপ্ত হয়ে ওঠে। বিক্ষুব্ধ ছাত্র-জনতা আগুন দেয় আনসার অফিস, জেলা আওয়ামী লীগের কার্যালয়সহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন স্থাপনা ও আওয়ামী লীগ নেতাদের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে। এরই ধারাবাহিকতায় গতকাল সোমবার সকাল থেকেই শহরের বিভিন্ন জায়গায় অবস্থান নেন আন্দোলনকারীরা। একপর্যায়ে শেরপুর সদর থানা, জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটের ডরমিটরি, শ্রীবরদী উপজেলা পরিষদ কার্যালয়, বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদ ভবন, আওয়ামী লীগ কার্যালয়, শেরপুর-১ (সদর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছানুয়ার হোসেন ছানুর বাড়ি, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর রুমানের বাড়ি, জেলা মহিলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শামসুন্নাহার কামাল, সাধারণ সম্পাদক নাসরিন বেগমের বাড়িসহ আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িতে হামলা-ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে দুর্বৃত্তরা।
পরে শেখ হাসিনার পদত্যাগের খবর পেয়ে শেরপুর শহরে আনন্দ মিছিল শুরু হয়। বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে জেলা কারাগারে হামলা ও ভাঙচুর চালায় দুর্বৃত্তরা। কারাগারের প্রধান গেট ভেঙে ভেতরে ঢুকে লুটপাট চালানো হয়। এ সময় কারাগারে থাকা ৫২৭ বন্দী পালিয়ে যান।
শেরপুরের জেলা প্রশাসক মো. আব্দুল্লাহ আল খায়রুম কারাগারে ভাঙচুর, লুটপাট ও বন্দী পলায়নের বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন, জেলা কারাগারে দুর্বৃত্তরা হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাট চালিয়েছে। ওই সময় সব বন্দী পালিয়ে গেছেন।
এ বিষয়ে কারা কর্তৃপক্ষের কারও সঙ্গে যোগাযোগ করা যায়নি।
এর আগে গত ১৯ জুলাই নরসিংদী জেলা কারাগারে হামলা চালান আন্দোলনকারীরা। ওই সময় কারাগারে থাকা ৯ জঙ্গিসহ ৮২৬ বন্দীর সবাই পালিয়ে যান।
সাতক্ষীরায় পালিয়েছেন ৫৯৪ বন্দী
সাতক্ষীরায়ও জেলা কারাগারে আগুন লাগানো এবং ভাঙচুরের ঘটনা ঘটছে। এতে কারাগারে থাকা ৫৯৪ বন্দীর সবাই পালিয়ে গেছেন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, বিক্ষুব্ধ জনতা গতকাল বিভিন্ন স্থাপনা এবং আওয়ামী লীগ নেতাদের বাড়িঘরে হামলা চালায়। একপর্যায়ে রাত ৮টার দিকে জেলা কারাগারে হামলা, ভাঙচুর এবং আগুন ধরিয়ে দেয়। তখন প্রধান ফটক দিয়ে সব বন্দী বের হয়ে যান।
জেলা কারাগারের জেল সুপার (অতিরিক্ত দায়িত্ব) বিষ্ণুপদ পাল জানান, কারাগারে ৫৯৪ জন বন্দী ছিলেন। তাঁরা সবাই পালিয়েছেন।
এ ছাড়া গতকাল বিকেলে চট্টগ্রাম কেন্দ্রীয় কারাগারে হামলার চেষ্টা করেন বিক্ষুব্ধ লোকজন। তখন কারাগারের ভেতর থেকে ফাঁকা গুলি ছুড়ে হামলাকারীদের নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেন কারারক্ষীরা। চট্টগ্রাম জেল সুপার মো. মনজুর হোসেন সন্ধ্যা ৬টার দিকে বলেন, ‘এখন পর্যন্ত জেলখানার ভেতরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক আছে। বাইরে মানুষ অনেক।’
সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারেও গতকাল সন্ধ্যায় হামলার চেষ্টা করা হয়। কারারক্ষী ও নিরাপত্তাকর্মীরা সেটি প্রতিহত করেছেন। সিলেট কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার মো. শাখাওয়াত হোসেন জানান, ‘হামলার চেষ্টা করা হয়েছিল। আমরা সেটি প্রতিহত করেছি। পরে সেনাবাহিনী এসে অবস্থান নিয়েছে।’