ইজাজুল হক
ইন্দোনেশিয়ার বান্দুং শহরে সম্প্রতি দৃষ্টিনন্দন এক মসজিদ উদ্বোধন করা হয়েছে। দাপ্তরিক নাম আল-জাব্বার গ্র্যান্ড মসজিদ হলেও হ্রদের ওপর নির্মিত হওয়ায় এটি স্থানীয় লোকজনের কাছে আল-জাব্বার ভাসমান মসজিদ হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে। গত ৩০ ডিসেম্বর আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হওয়ার পর নান্দনিক এই মসজিদ পর্যটকদের আকর্ষণের কেন্দ্র হয়ে উঠেছে। মসজিদের স্থাপত্যশৈলীর কথা লিখেছেন ইজাজুল হক।
ইন্দোনেশিয়ার পশ্চিম জাভা প্রদেশের রাজধানী বান্দুং দেশটির সবচেয়ে জনবহুল শহর। শহরের পূর্ব দিকে অবস্থিত গেদেবেজ হ্রদের ওপরেই নির্মিত হয় অপূর্ব স্থাপত্যশৈলীর আল-জাব্বার গ্র্যান্ড মসজিদ, যার স্থানীয় নাম মসজিদ রায়া আল-জাব্বার। আরবি আল-জাব্বার শব্দের অর্থ মহান, এটি আল্লাহ তাআলার ৯৯ গুণবাচক নামের একটি। এ ছাড়া মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদানে সমৃদ্ধ বীজগণিতকে ইন্দোনেশিয়ান ভাষায় আল-জাবার বলা হয়। আরও কাকতালীয় ব্যাপার হলো, পশ্চিম জাভা প্রদেশের সংক্ষিপ্ত নামও আল-জাবার। তাই সব দিক বিবেচনা করে এই মসজিদের নাম রাখা হয়েছে আল-জাব্বার গ্র্যান্ড মসজিদ।
২০১৭ সালের ২৯ ডিসেম্বর প্রায় ২৬ হেক্টর জায়গার ওপর আল-জাব্বার গ্র্যান্ড মসজিদ কমপ্লেক্সের নির্মাণকাজ শুরু হয়। প্রদেশের তৎকালীন গভর্নর আহমদ হেরিয়াওয়ান ও উপগভর্নর ডেডি মিজওয়ারের হাতেই মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপিত হয়। মসজিদের নান্দনিক নকশা করেছেন বিখ্যাত ইন্দোনেশিয়ান স্থপতি ও পশ্চিম জাভার বর্তমান গভর্নর রিদওয়ান কামিল। অবশ্য তখন তিনি বান্দুং শহরের মেয়র ছিলেন।
আধুনিক, অটোমান ও পশ্চিম জাভার সুন্দানিজ স্থাপত্যরীতির মিশেলে আল-জাব্বার গ্র্যান্ড মসজিদের নকশা করা হয়। ৩৩ হাজার মুসল্লির ধারণক্ষমতাসম্পন্ন এই বিশাল মসজিদ নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ৬৬৬ কোটি টাকা।
মসজিদ কাঠামোর চার কোনায় ঠায় দাঁড়িয়ে আছে ৩২৫ ফুটের আকাশছোঁয়া চারটি সুদর্শন মিনার। মিনারের নকশায় আধুনিকতার ছাপ স্পষ্ট। মসজিদের মূল হলঘরের ছাদটি ঢালু হয়ে আকাশের দিকে উঠে অনিন্দ্যসুন্দর এক গম্বুজে পরিণত হয়েছে। বিশাল গম্বুজের গায়ে মাছের আঁশের আকৃতির ৬ হাজার ১৩৬টি কাচের জানালা রয়েছে। দূর থেকে দেখলে মসজিদের মূল ভবনের এই সব কাচের জানালাকে মাছের আঁশই মনে হয়।
মসজিদে প্রবেশের জন্য ২৭টি দরজা করা হয়েছে, যা পশ্চিম জাভার ২৭টি শহরের প্রতিনিধিত্ব করে। একেকটি দরজায় একেক শহরের ইতিহাস-ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়েছে। মসজিদের মেঝেতে বিছানো হয়েছে চমৎকার তুর্কি কার্পেট।
১১ হাজার বর্গমিটার জায়গায় মসজিদের মূল অংশটি নির্মিত হয়েছে। মসজিদের প্রথম তলায় ১০ হাজার, মাঝের ফ্লোরে ৩ হাজার, হলকক্ষে সাড়ে ৩ হাজার এবং সামনের সুপরিসর উঠানে ১৬ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন।
স্বচ্ছ হ্রদের মধ্যভাগে স্বমহিমায় দাঁড়িয়ে থাকা শুভ্র-সুন্দর এই মসজিদ দিনের আলোয় যেমনটি দর্শনার্থীদের হাতছানি দিয়ে ডাকছে, একইভাবে রাতের রকমারি আলোর ঝলকানিও পর্যটকদের হৃদয় জুড়িয়ে দেওয়ার অপেক্ষা করছে।