Ajker Patrika
হোম > ছাপা সংস্করণ

কাজ সমান, মজুরি কম নারীর

জাহিদ হোসেন, সুন্দরগঞ্জ (গাইবান্ধা)

কাজ সমান, মজুরি কম নারীর

বিকেল গড়িয়ে সন্ধ্যা। মাথায় সংসারের হাজারো চিন্তা, চোখে-মুখে ক্লান্তির ছাপ। কাঠফাটা রোদে সারা দিনের হাড়ভাঙা পরিশ্রমের পর মজুরি পাওয়ার অপেক্ষায় মনজুয়া বেগম (৫০)। কাছে গিয়ে জানতে চাইলে খানিকটা আক্ষেপে বলেন, ‘সারা দিন সমানতালে পুরুষদের সঙ্গে কাজ করলাম। মজুরির বেলায় হামাক শেষে ফেলাইছে। সব জায়গায় হামারগুলার (নারীদের) কষ্ট।’

মনজুয়া বেগম আরও বলেন, একই কাজের জন্য পুরুষেরা পান ৪৫০ টাকা। শুধু নারী বলেই তাঁকে ১৫০ টাকা কম দেওয়া হয়। শুধু তা-ই নয়, মাঝে মাঝে মজুরি পেতেও সমস্যা হয়। অনেক সময় বাকি থাকে। আবার কাজ না পেলে সংসারে নেমে আসে অন্ধকার। ছেলের পড়ালেখার খরচ তো দূরের কথা, তখন থাকতে হয় আধপেটা।

উপজেলার বামনডাঙ্গা ইউনিয়নের ফলগাছা গ্রামের মৃত আনারুল ইসলামের স্ত্রী মনজুয়া বেগম। ১৪ বছর আগে স্বামী মারা যান। দুই সন্তান নিয়ে বেঁচে থাকার লড়াইটা শুরু হয় তাঁর তখন থেকেই। বড় ছেলে এখন এইচএসসির শিক্ষার্থী। ছোট ছেলে কোরআনে হাফেজ হওয়ার পর দাখিলে অধ্যয়নরত। ছেলে দুটি মানুষ না হওয়া পর্যন্ত এ সংগ্রাম চলবে বলেও জানান তিনি।

নারী শ্রমিকদের অভিযোগ, কৃষি থেকে শুরু করে ইটভাটা, রাজমিস্ত্রিসহ বিভিন্ন কাজ করেন তাঁরা। কাজের সমতা থাকলেও নেই মজুরির সমতা। প্রতিটি ক্ষেত্রেই মজুরি নিয়ে বৈষম্যের শিকার হয়ে নারী শ্রমিকদের ঠকতে হচ্ছে। এই বৈষম্য রোধে উদ্যোগ নেই সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো প্রতিষ্ঠানের। পুরুষদের সঙ্গে তাল মিলিয়ে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করেও নারী শ্রমিকেরা কাঙ্ক্ষিত পারিশ্রমিক পাচ্ছেন না, এমন অভিযোগ অনেকের।

উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তার অফিস সূত্র জানায়, ২০২১-২২ অর্থবছরে উপজেলার ১৫ ইউনিয়নে ‘অতিদরিদ্রদের জন্য কর্মসূচি’তে (ইজিপিপি) কাজ করেন চার হাজার শ্রমিক। এ প্রকল্পের আওতায় নারী ও পুরুষ শ্রমিকদের সমমর্যাদা দেওয়া হয়েছে। তবে স্থানীয়ভাবে কাজ করতে গেলে নারী-পুরুষের মধ্যে মজুরি নিয়ে বৈষম্য লক্ষ্য করা যায়।

জানা গেছে, প্রায় ৮ লাখ লোকের বসবাস উপজেলায়। এক-তৃতীয়াংশ মানুষ শ্রম বিক্রি করে সংসার চালায়। এর দুই ভাগের এক ভাগই নারী শ্রমিক। সরকারের নানা উন্নয়নমুখী কর্মকাণ্ডসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নে এসব নারী শ্রমিকের অংশগ্রহণ থাকলেও পারিশ্রমিকের বেলায় পুরুষের অর্ধেক মজুরিতে কাজ করতে হচ্ছে নারীদের।

একদল নারী-পুরুষ দল বেঁধে কাজ করছিলেন পাটখেতে। সেখানে কথা হয় নারী শ্রমিক সেকেনভানুর সঙ্গে (৫৫)। ঘরের রান্না শেষ করে সকাল ৭টার দিকে ঘর ছাড়তে হয় তাঁকে। ৮টায় গৃহস্থের বাড়ি পৌঁছাতে না পারলে কাজে নেওয়া হয় না। তাই ৮টার মধ্যে উপস্থিত হয়ে শুরু করেন কাজ। বিকেল ৫টায় কাজ শেষে মজুরি পান ৩০০ টাকা। ৯ ঘণ্টা একই কাজ করে একজন পুরুষ পান ৪৫০ টাকা। কর্মঘণ্টা, কাজের পরিমাণ ও ধরন এক হলেও পার্থক্য শুধু মজুরির বেলায়। দীর্ঘদিন ধরে নারী শ্রমিকেরা এভাবে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। দিনভর মাঠে রোদে পুড়েও পাচ্ছেন না ন্যায্য মজুরি।

দলের পুরুষ সহকর্মী রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘এক সঙ্গে পাটখেতে এসেছি। আমরা যতক্ষণ থাকব, মহিলারাও ততক্ষণ থাকবে। পরিশ্রমও সমান সমান। সবই ঠিক আছে কিন্তু আমরা পুরুষ আর তারা মহিলা। সে কারণেই মজুরি কম-বেশি। এটা আগে থেকেই হয়ে আসছে। করার কিছু নেই।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ-আল-মারুফ বলেন, ‘শুধু সুন্দরগঞ্জে নয়, সারা দেশেই নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ প্রশংসনীয়। প্রতিটি শ্রমিকের পারিশ্রমিকের ব্যাপারে সরকারি কর্ম মজুরি বোর্ড রয়েছে। নারী শ্রমিকেরা যেহেতু উন্নয়নের অংশীদার, সেহেতু তাঁদের ফাঁকি দেওয়া বা মজুরি কম দেওয়া অমানবিক। স্থানীয়দের বৈষম্য না করার অনুরোধ জানাই।’

মহাসড়কে ডাকাতি, লক্ষ্য প্রবাসীরা

বিআরটি লেনে বেসরকারি বাস

হইহুল্লোড় থেমে গেল আর্তচিৎকারে

সন্দ্বীপ সুরক্ষা প্রকল্প: এক বছরেও শুরু হয়নি কাজ

ঢাকা সড়ক পরিবহন: প্রশ্নবিদ্ধ কমিটিতেই চলছে মালিক সমিতির কার্যক্রম

৪০ টাকা কেজিতে আলু বিক্রি করবে টিসিবি

৮ বছরে শিশুহত্যা হয়েছে ৪০০০

যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানিতে প্রবৃদ্ধির শীর্ষে বাংলাদেশ, তবে বাজারে পিছিয়ে

দেশে ব্যবসায় ঘুষ–দুর্নীতিসহ ১৭ রকমের বাধা

বিদ্যালয়ের জমিতে ৩৯১টি দোকান, ভাড়া নেয় কলেজ