বদরগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ২০২১-২২ অর্থবছরে পথ্য সরবরাহের কাজ পছন্দের ব্যক্তিকে দিতে গোপনে দরপত্র আহ্বানের অভিযোগ পাওয়া গেছে। দরপত্র কমিটির সভাপতি এবং উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) আই এফ এম সিদ্দিকুল ইসলাম খানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ উঠেছে।
সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানান, আগে দুবার জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করার পরও ঠিকাদার নির্বাচন করা হয়নি। সর্বশেষ তৃতীয়বারের মতো ২৭ মে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়। বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুর ১২টায় দরপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময় ছিল।
অভিযোগ উঠেছে, টিএইচও তাঁর পছন্দের ব্যক্তিকে কাজ দিতে না পেরে আগের দুটি দরপত্র ইচ্ছাকৃতভাবে বাতিল করেন। তৃতীয়বার অতি গোপনে একটি জাতীয় ইংরেজি এবং একটি বাংলা দৈনিকে বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরপত্র আহ্বান করা হয়। বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দিন ওই দুই পত্রিকা বদরগঞ্জ উপজেলায় সরবরাহ করা হয়নি।
আরও অভিযোগ রয়েছে, বিজ্ঞপ্তির বিধি ঠিকঠাক রাখতে টিএইচওর পছন্দের ব্যক্তি ছয়জনের নামে ছয়টি দরপত্র ফেলেন। তবে যাঁদের নামে দরপত্র ফেলা হয়, তাঁরা এলাকায় থাকেন না এবং তাঁদের স্বাক্ষরগুলো জাল করা হয় বলে একাধিক সূত্রে জানা গেছে। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে তাৎক্ষণিক আরেকটি গ্রুপ দুটি দরপত্র ফেলে।
পৌর যুবলীগের আহ্বায়ক আবু তালহা বলেন, ‘টিএইচও তাঁর পছন্দের লোককে কাজ পাইয়ে দিতে অতি গোপনে পত্রিকায় টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেন। গত বুধবার তা জানার পর এক ঠিকাদারকে সঙ্গে নিয়ে ব্যাংকে তাৎক্ষণিক টাকা জমা দিয়ে শিডিউল কাটি। শিডিউল অনুযায়ী অল্প সময়ের মধ্যে কাগজপত্র ম্যানেজ করতে অনেক বেগ পেতে হয়। তবুও ব্যাংকে ৬৯ হাজার টাকার পে-অর্ডার কেটে সব কাগজপত্র ম্যানেজ করে বৃহস্পতিবার ঠিক দুপুর ১২টার দিকে শিডিউল ফেলতে যায়। কিন্তু ফেলতে দেননি টিএইচও। তিনি বলেন, সময় শেষ, বাড়ি যাও।’
বদরগঞ্জ পৌরসভার কাউন্সিলর ফারুক সরদার মধু দাবি করেন, সাবেক ছাত্রলীগ নেতা আব্দুল কুদ্দুস পাঁচ বছর ধরে হাসপাতালের প্রধানকে হাত করে সব ঠিকাদারি কাজ বাগিয়ে নিচ্ছেন। এখানে আর কেউ পাত্তা পাচ্ছেন না। এবারও তাঁকে কাজ দেওয়ার জন্য নানা কৌশল অবলম্বন করছেন টিএইচও। সম্প্রতি ওষুধ সরবরাহ, ধোপার কাজসহ ছয়টি কাজ নিয়েছেন ওই ছাত্রলীগ নেতা।
হাসপাতালের দুজন কর্মচারী জানান, আগে অনেকেই হাসপাতালের দরপত্রে অংশ নিতেন। কিন্তু ওই ছাত্রলীগ নেতার প্রভাবের কারণে এখন অন্য কেউ আর অংশ নিতে চান না।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কুদ্দুস বলেন, ‘আমি নিজ নামে লাইসেন্স থাকলেও কাজ পাই না। অন্যের নামে পাই। এতে প্রভাব খাটানোর অভিযোগ সঠিক নয়।’
এদিকে নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক ঠিকাদার জানান, বৃহস্পতিবার ১২টা ৩০ মিনিটে দরপত্র খোলার কথা ছিল। যিনি বাজারমূল্য অনুযায়ী কম দর দেবেন, তাঁকেই খাদ্য সরবরাহে নিয়োগ করার কথা দরপত্র কমিটির। কিন্তু বাক্স থেকে শিডিউল আটটি বের করা হলেও রহস্যজনক কারণে তা না খুলে টিএইচও হাসপাতাল ত্যাগ করেন।
এ বিষয়ে টিএইচও সিদ্দিকুল বলেন, ‘অফিসের কিছু গাফিলতির কারণে আগের দুটি টেন্ডার বাতিল হয়েছে। আজ (বৃহস্পতিবার) টেন্ডার ওপেন কমিটির সভাপতি ডা. ফয়জুল হাসান চৌধুরী ছুটিতে থাকায় তা ওপেন করা সম্ভব হয়নি।’
পছন্দের ব্যক্তিকে কাজ দেওয়ার অভিযোগ সম্পর্কে জানতে চাইলে টিএইচও বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগ মিথ্যা। এবার টেন্ডার বাতিল হবে না। বিধিমোতাবেক টেন্ডারে ঠিকাদার নিয়োগ করা হবে।’
যোগাযোগ করা হলে দরপত্র খোলা কমিটির সভাপতি ফয়জুল হাসান বলেন, ‘আমি ওই কমিটির সভাপতি তা আগে জানতাম না। বুধবার ছুটি নেওয়ার সময়ও আমাকে জানানো হয়নি। অসুস্থ মাকে নিয়ে ঢাকা আসার পর আজ (বৃহস্পতিবার) হাসপাতাল থেকে জানানো হয়েছে আমি নাকি ওই কমিটির সভাপতি।’