রোগ নির্ণয় করতে না পারায় ঢাকার সাভারে আমিনুল ইসলাম (২৮) নামের এক যুবকের চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েছে তাঁর পরিবার। চিকিৎসকদের পক্ষ থেকে প্রথমে অ্যাপেন্ডিসাইটিসের কথা বলে তাঁর দেহে অস্ত্রোপচার করা হলেও এখন বলা হচ্ছে যক্ষ্মা হয়েছে তাঁর। দিন দিন আমিনুলের শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছে, এমন অভিযোগ করেছে তাঁর পরিবার। বিষয়টি খতিয়ে দেখতে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।
আমিনুল ইসলাম সাভার পৌর এলাকার ছায়াবীথির আবদুর রশিদের ছেলে। তিনি পেশায় রং মিস্ত্রি। তাঁর বাবা আবদুর রশিদ একটি বিপণিবিতানের নৈশপ্রহরী।
আমিনুল ইসলামের পরিবারের পক্ষ থেকে জানানো হয়, তলপেটে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভব করায় আমিনুলকে গত ২১ জানুয়ারি সাভারের তালবাগের সেন্ট্রাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক মোহাম্মদ আবু তাহের মিয়া পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমিনুলের অ্যাপেন্ডিসাইটিস থেকে ব্যথা হওয়ার কথা জানান। তখন অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তা দ্রুত অপসারণ করার পরামর্শ দেন তিনি।
চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী পরিবার সম্মতি দিলে ওই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আমিনুলের অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপসারণ করা হয়। এরপরেও তাঁর তলপেটের ব্যথা কমেনি। এ অবস্থায় সাত দিন হাসপাতালে রেখে গত ২৮ জানুয়ারি আমিনুলকে ছেড়ে দেওয়া হয়। তখনো তাঁর পেটে ব্যথা ছিল। বাসায় যাওয়ার পর তাঁর অবস্থার আরও অবনতি হতে থাকে।
আমিনুলের বাবা আবদুর রশিদ বলেন, বাসায় যাওয়ার পর শারীরিক অবস্থার আরও অবনতি হলে গত ৭ ফেব্রুয়ারি তাঁর ছেলেকে জালেশ্বর এলাকার সুপার মেডিকেল হাসপাতালে ভর্তি করেন। ওই হাসপাতালের চিকিৎসকেরা তাঁর ছেলের নাড়িভুঁড়িতে প্যাঁচ লেগেছে বলে জানান। আর এ থেকেই তাঁর তলপেটে তীব্র ব্যথা হচ্ছে, যার একমাত্র চিকিৎসা অস্ত্রোপচার। এ জন্য তাঁদের টাকা জোগাড় করতে বলা হয়।
আবদুর রশিদ বলেন, দুই হাসপাতালে প্রায় ৫০ হাজার টাকার পরীক্ষা-নিরীক্ষা করানোর পরেও তাঁর ছেলের শারীরিক সমস্যা নিয়ে দুই হাসপাতাল থেকে দুই রকম তথ্য দেওয়ায় তাঁরা ছেলের চিকিৎসা নিয়ে বিভ্রান্তির মধ্যে পড়েন। এ অবস্থায় প্রতিকার চেয়ে গত রোববার তিনি সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তার কাছে লিখিত অভিযোগ করেন। অভিযোগের পর সুপার মেডিকেল হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ তাঁর ছেলের চিকিৎসা করতে অপারগতা প্রকাশ করে। এ অবস্থায় সেন্ট্রাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সঠিক চিকিৎসার কথা বলে তাঁর ছেলেকে গতকাল সোমবার তাদের হাসপাতালে নিয়ে ভর্তি করে।
অভিযোগ সম্পর্কে সেন্ট্রাল মেডিকেল ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হাসপাতালের পরিচালক (প্রশাসন) ওয়াহিদ আলী বলেন, অ্যাপেন্ডিসাইটিসের ব্যথা নিয়েই আমিনুল তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে তাঁকে সুস্থ করে বাসায় পাঠিয়ে দেওয়া হয়। পরে কী সমস্যার কারণে তাঁকে অন্য হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল, তা চিকিৎসকেরা বলতে পারবেন।
ওয়াহিদ আলী বলেন, ‘তাঁদের হাসপাতালে (সেন্ট্রাল) ভুল চিকিৎসার অভিযোগ ওঠায় সোমবার তাঁরা আমিনুলকে নিয়ে এসে পুনরায় তাঁদের হাসপাতালে ভর্তি করেছেন। তাঁর চিকিৎসার ব্যয় হাসপাতাল থেকেই বহন করা হবে।’
আমিনুলের বর্তমান চিকিৎসক খান হাসানুজ্জামান বলেন, ‘ব্যথার ধরন দেখে মনে হচ্ছে আমিনুল ইসলামের নাড়িভুঁড়িতে যক্ষ্মা হয়েছে। সেই অনুযায়ী চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। ১৭ থেকে ১৮ দিন ওষুধ সেবনের পর তাঁর অবস্থার উন্নতি হলে তাঁকে ওই ওষুধ চালিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হবে। আর অবনতি হলে পুনরায় পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’
জানতে চাইলে সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা সায়েমুল হুদা বলেন, অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে গতকাল সোমবার তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। পাঁচ কর্মদিবসের মধ্যে তাঁদের প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। প্রতিবেদন পাওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।