স্থান টাঙ্গাইল জেলার ঘাটাইলের দিঘলকান্দি ইউনিয়নের উকিলদা গ্রাম। ১৯৯২ সাল থেকে অদ্যাবধি এটা আমার অন্যতম সোশ্যাল ল্যাব। বোরো ধান কাটা শেষ। দেশি আমন চারা ধান বুনছে। এখন কাজের চাপ কম। কেউ কেউ অবসরে ভ্যান বা পাওয়ার টিলার চালায়। ৩০-৩৫ বছর আগে দেখা গ্রামটি এখন ভিন্ন রূপ। পাকা রাস্তা, দুই পাশে পাকা বাড়িঘর, দালানকোঠা। যেখানে-সেখানে দোকানপাট। তরুণেরা কেউ বাইরে, কেউ অকৃষি খাতে। বয়স্ক ব্যক্তিরা এখানে-ওখানে, দোকানে, আমগাছতলায় বসে গালগপ্পে মশগুল। এমনটাই চাইছিলাম। বসে পড়লাম তাঁদের সঙ্গে অ্যানালগ আড্ডায়। স্থানীয় কথ্য ভাষা কিছুটা জানা থাকায় সুবিধা হয়। কত রকমের কথা! কিছু কিছু ধানখেতে এবার পোকা লেগেছিল। ফলন কম হয়েছে। তবে বছরের খাবারটা ঘরে ওঠানো গেছে, তাতেই খুশি। শ্রমিকের মজুরি চড়া, সার-ডিজেলের দাম বেড়েছে। সেই হিসাবে ধানের দাম বেশ কম। ৮০০-৯০০ টাকা মণ। হিসাব করলে খরচ ওঠে না। তবু করতে হয়।
আমার নতুন গবেষণার বিষয় কৃষির পরিবর্তনগুলো সরেজমিনে দেখা এবং এর ফলে কার কী লাভ-ক্ষতি, তা বোঝা। একটি ছোটখাটো মতবিনিময়, অর্থাৎ এফজিডি হয়ে গেল গবেষণাপদ্ধতির প্রাগ-বাছাই হিসেবে।
ঘণ্টা দুয়েক আলাপের পর ফিল্ড নোট নিয়ে উঠব। এমন সময় একজন বলে উঠলেন, ‘আপনার লগে এতক্ষণ কতা কইলাম, তাতে আমরার কী পাইবাম?’ চা-বিস্কুট খাওয়ানো ছাড়া কিছুই দিইনি। লজ্জা পেলাম। এমন লজ্জা বহু বছর ধরে পেতে পেতে কিছুটা নির্লজ্জ হয়ে গেছি। মনে পড়ল ইংল্যান্ডে সুনীলের ইরিগেশন ডেটা কালেকশন শেষে উত্তরদাতা ফারমারের সময়ের দাম হিসেবে একটি বিল ধরিয়ে দেওয়ার কথা। আমাদের কৃষক অন্তত তা করেননি। তাঁর সময়ের তো দাম আছে নাকি? তবে ফিল্ড ওয়ার্ক বাজেটে এমন একটি উপখাত রাখা সংগত হবে।
লেখক: ইমেরিটাস অধ্যাপক, বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়