সুরমা নদীভাঙনের মুখে সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার যোগাযোগের প্রধান সড়কটি। ১৩ গ্রামের বাসিন্দাদের যোগাযোগের একমাত্র সড়ক এটি। ইতিমধ্যে ভাঙনে নদীর তীরবর্তী একাধিক স্থাপনা বিলীন হয়ে গেছে। ভাঙনরোধে দীর্ঘদিন ধরে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েও কোনো কাজ হচ্ছে না বলে ক্ষোভ জানিয়েছেন স্থানীয়রা।
সরেজমিন দেখা যায়, উপজেলার সাচনা বাজার ইউনিয়ন পরিষদ থেকে ফাজিলপুর, নূরপুর, সুজাতপুর, রামনগর, শুকদেবপুরসহ ১৩টি গ্রামের সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র সড়কটি নদীভাঙনের কবলে পড়েছে।
যেকোনো সময় ধসে নদীগর্ভে বিলীন হতে পারে রক্তির পশ্চিম পাড়ের নূরপুর গ্রামে যাওয়ার সড়কটি।
স্থানীয়রা জানান, প্রতিবছরই নদীভাঙনের কবলে পড়ে সুরমা নদীর তীরবর্তী গ্রামগুলো। তবে এবার বাদ পড়েনি যোগাযোগের একমাত্র পাকা সড়কটি। গত বর্ষায় ব্যাপক হারে ভাঙন শুরু হয়। এখন নদীতে পানি কমায় আবারও ভাঙন শুরু হয়েছে। সড়ক মেরামতের দাবি জানিয়ে এলেও সংস্কারের উদ্যোগ নেয়নি সংশ্লিষ্টরা।
ফাজিলপুর গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রশীদ বলেন, ‘রক্তির পূর্বপাড়ে প্রায় ১৩টি গ্রাম। এই গ্রামগুলোর একমাত্র যোগাযোগের পথ এটি। দীর্ঘদিন ধরে সুরমা নদীর ভাঙনে তীরের গ্রামগুলো ভাঙতে ভাঙতে এখন রাস্তায় এসে ঠেকেছে। নদীভাঙন রোধে সরকারকে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাই।’
নদীর তীরে থাকা বালু-পাথর ব্যবসায়ী মো. মারুফ মিয়া বলেন, ‘আমি দীর্ঘদিন ধরে নদীর তীরে বালু-পাথর মজুত রেখে ব্যবসা করছি। এখানে আমার একটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ছিল। কিন্তু বর্তমানে তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। বর্তমানে যে দোকানে ব্যবসা করছি, সেটিও যেকোনো সময় নদীগর্ভে চলে যেতে পারে। বিশেষ করে বর্ষাকালে নদীতে বেশি ভাঙন ধরে।’
এ সময় তিনি আরও বলেন, ‘রাতের আঁধারে ড্রেজার দিয়ে একটি মহল নদী থেকে মাটি তুলে নৌকাযোগে নিয়ে যায়। ফলে নদীভাঙন আগের তুলনায় বেড়ে গেছে। এ নিয়ে আমরা গ্রামবাসী মানববন্ধনও করেছি। কিন্তু সমাধান মেলেনি।’
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ইকবাল আল আজাদ বলেন, সুরমার ভাঙন অত্যন্ত ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। এ সড়ক ছাড়াও উপজেলার আরও একাধিক এলাকাতে ব্যাপক হারে নদীভাঙন শুরু হয়েছে। নূরপুর, সুজাতপুর, উত্তর কামলাবাজের টার্নিং পয়েন্ট, গজারিয়া বাজার ও আমানীপুরসহ একাধিক এলাকার ভাঙনের মুখে পড়েছে। বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানিয়েছি। এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ডেও (পাউবো) জানানো হয়েছে।
ভাঙনরোধে পানি উন্নয়ন বোর্ড নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জহুরুল ইসলাম বলেন, ‘বর্তমানে নদীভাঙন রোধ ও নাব্যসংকটে যে সমস্যা রয়েছে, তা সমাধানের জন্য ইতিমধ্যে আলাদা প্রকল্প আকারে প্রস্তাবনা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এগুলো অনুমোদন হলে আশা করি কাজ শুরু হবে।’