আগামী জুন মাসের শেষ নাগাদ যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে পদ্মা সেতুর সড়কপথ। পদ্মা সেতু যেদিন চালু হবে একই দিনে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ট্রেনও চলবে—শুরুতে এমনটাই বলেছিল বাংলাদেশ রেলওয়ে। কিন্তু নানা জটিলতায় সেই জায়গা থেকে সরে এসেছে তারা। পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের এখন পর্যন্ত যে অগ্রগতি তাতে কবে নাগাদ ট্রেন চলবে, তার কোনো নিশ্চয়তা দিতে পারছেন না সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
পদ্মা রেল সংযোগ প্রকল্পের অগ্রগতি নিয়ে পাওয়া সর্বশেষ তথ্য বলছে, এই প্রকল্পের ঢাকা থেকে মাওয়া অংশের কাজ হয়েছে ৫৫ শতাংশ। আর মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৭৮ শতাংশ এবং ভাঙ্গা থেকে যশোর পর্যন্ত কাজ হয়েছে ৪৯ দশমিক ৫০ শতাংশ। সব মিলিয়ে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রকল্পের মূল কাজের ভৌত অগ্রগতি ৫৬ দশমিক ৫০ শতাংশ। অর্থাৎ প্রায় অর্ধেক কাজই বাকি।
প্রকল্পটির ঢাকা থেকে মাওয়া অংশে ২৩ কিলোমিটার উড়ালপথ হবে। উড়ালসড়কের অংশে আট কিলোমিটার রেললাইন বসানো হয়েছে। সেই সঙ্গে পদ্মা সেতুর দুই পাড়ে সেতুর রেল সংযোগ অংশে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ হয়েছে। তবে মূল সেতুতে রেললাইন বসানোর অনুমতি এখনো পায়নি রেল সংযোগ কর্তৃপক্ষ।
সেতু উদ্বোধনের ছয় মাস আগেই রেললাইন বসানোর কাজের অনুমতি দিতে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষকে দফায় দফায় চিঠি দিয়েছিল রেল সংযোগ কর্তৃপক্ষ। কিন্তু সেই অনুমতি তারা পায়নি।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, সর্বশেষ গত ২৭ এপ্রিল সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজের অনুমতি চেয়ে পদ্মা সেতু কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি দেয় পদ্মা রেল সংযোগ কর্তৃপক্ষ। সেই চিঠির জবাব এসেছে ৫ মে। রেল সংযোগ কর্তৃপক্ষকে দেওয়া সেই চিঠিতে বলা হয়েছে, সেতুতে গ্যাস পাইপলাইন বসানো এবং হাঁটাপথ নির্মাণকাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে আছে। সেতু কর্তৃপক্ষ আশা করছে, জুলাইয়ের মাঝামাঝি রেলপথ স্থাপনসহ আনুষঙ্গিক কাজ করার জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছে হস্তান্তর করা হতে পারে। খুব শিগগির চূড়ান্ত একটি তারিখ ঘোষণা করা হবে।
এই চিঠি পাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পদ্মা সেতু রেল সংযোগের প্রকল্প পরিচালক মো. আফজাল হোসেন। আজকের পত্রিকাকে তিনি বলেন, এখনো আনুষ্ঠানিকভাবে কাজের অনুমতি পাওয়া যায়নি। তবে জুলাইয়ের মাঝামাঝিতে সাইট হস্তান্তর করার কথা চিঠিতে জানিয়েছে তারা।
আগামী জুলাইয়ের ১৫ থেকে ২০ তারিখের মধ্যে সাইট হস্তান্তর করা হলে রেল সংযোগ কর্তৃপক্ষ ছয় মাসের মধ্যেই সেতুতে রেললাইন বসানোর কাজ শেষ করতে পারবেন বলেও আশা প্রকাশ করেন প্রকল্প পরিচালক।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শামসুল হক আজকের পত্রিকা’কে বলেন, সেতুর ওপরে গাড়ি চালানোর আগে সেতুর নিচে রেললাইনের কাজটা শেষ করলে ভালো হতো। সেখানে একটা সমন্বয়ের দরকার ছিল।
স্বপ্নের পদ্মা সেতু সম্পর্কে সবশেষ খবর পেতে - এখানে ক্লিক করুন
৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ পদ্মা সেতু বাস্তবায়ন করছে সেতু বিভাগ। ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার মূল রেলপথ ছাড়াও ৪৬ কিলোমিটার লুপ লাইন নির্মাণে কাজ করছে রেলপথ মন্ত্রণালয়, যা পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্প নামে পরিচিত। পদ্মা সেতুর রেল সংযোগ প্রকল্প ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বাস্তবায়িত হচ্ছে ২০১৬ সালের জানুয়ারি থেকে, শেষ হবে ২০২৩ সালে।
পদ্মা সেতু সম্পর্কিত আরও পড়ুন: