জাতীয় সংসদে অনুমোদনের প্রায় পাঁচ বছর পর রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (রামেবি) অবকাঠামো নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি ৬৭ দশমিক ৭৮ একর জমি অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে। গত ১৪ সেপ্টেম্বর ভূমি মন্ত্রণালয়ের উপসচিব কবীর মাহমুদ চিঠি দিয়ে সংশ্লিষ্টদের ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদনের বিষয়টি জানিয়েছেন।
এরপর ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করেছে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের ভূমি অধিগ্রহণ শাখা। রাজশাহী মহানগরীর সিটিহাটসংলগ্ন বাজেসিলিন্দা ও বারইপাড়া মৌজায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়টি গড়ে উঠবে। ভূমি অধিগ্রহণের অনুমোদন পাওয়ার পর গত সোমবার মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় ও জেলা প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এলাকাটি পরিদর্শন করেছেন।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ১২ মে জাতীয় সংসদে ‘রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় আইন-২০১৬’ অনুমোদন লাভ করে। পরের বছরের ১০ এপ্রিল নিয়োগ দেওয়া হয় উপাচার্য।
তারপর রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শিক্ষকদের একটি তিনতলা আবাসিক ভবন এবং বিভাগীয় কন্টিনিউইং এডুকেশন সেন্টারের দোতলায় শুরু হয় রামেবির কার্যক্রম।
তারপর মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প প্রস্তুত করা হয়। এর মধ্যেই স্থায়ী ক্যাম্পাসের জন্য নগরীর নওদাপাড়া বাস টার্মিনালসংলগ্ন এলাকায় ৮৬ একর জায়গা পছন্দ করা হয়; কিন্তু ওই জায়গা নিয়ে দেখা দেয় নানা জটিলতা। তাই ওই জায়গা ছেড়ে নতুন করে বাজেসিলিন্দা ও বারইপাড়া মৌজায় মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের সিদ্ধান্ত হয়। সম্প্রতি এ জায়গাটিই অধিগ্রহণের অনুমোদন দিয়েছে কেন্দ্রীয় ভূমি বরাদ্দ কমিটি।
রাজশাহী জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের সহকারী কমিশনার (ভূমি অধিগ্রহণ শাখা) ইশতিয়াক মজনুন ইশতি বলেন, মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী ক্যাম্পাস নির্মাণের আগে জায়গা পছন্দ এবং এর অনুমোদনটাই সবচেয়ে বড় ব্যাপার ছিল। সেটা হয়ে গেছে। একনেকে প্রকল্পও অনুমোদন হয়েছে। এখন ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করা হয়েছে।
চলতি বছরের গত ১৪ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত একনেক সভায় রাজশাহী মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপন প্রকল্প অনুমোদন পায়। এতে ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৮৬৭ কোটি টাকা। ২০১৭ সালেই রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে থাকা ২৬টি মেডিকেল কলেজ ও ১৬টি নার্সিং কলেজ-ইনস্টিটিউটকে নিজেদের অধিভুক্তও করেছে রামেবি; কিন্তু স্থায়ী অবকাঠামো না থাকায় এখনো চিকিৎসা এবং একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয়নি। বিশেষায়িত এই বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ১০টি অনুষদের অধীন ৬৮টি বিভাগ থাকবে। প্রতিবছর গ্র্যাজুয়েট এবং পোস্টগ্র্যাজুয়েট
পর্যায় থেকে ৭৮০ জন শিক্ষার্থী শিক্ষা ও গবেষণার সুযোগ পাবেন। চিকিৎসক-নার্সসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার প্রায় পাঁচ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে। এ ছাড়া উন্নত চিকিৎসার আওতায় আসবে উত্তরাঞ্চলের প্রায় দুই কোটি মানুষ।
বিশ্ববিদ্যালয়টির দ্বিতীয় উপাচার্য এ জেড এম মোস্তাক হোসেন প্রকল্পের পরিচালক হিসেবে কাজ করছেন। তিনি বলেন, ‘পুরো বিশ্ববিদ্যালয়টি স্থাপন করা একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। একটার পর একটা প্রক্রিয়া শেষ করে কাজে এখন গতি ফিরেছে। জমি অধিগ্রহণ শেষ হলেই অবকাঠামো নির্মাণকাজ শুরু হবে। সবকিছুই দ্রুত করার চেষ্টা করছি।’