নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
এক কিশোরী স্কুলছাত্রী ‘মেঘনাদবধ কাব্য’ হাতে নিয়ে পোজ দিল। পাশে দাঁড়িয়ে থাকা তার বন্ধু ছবি তুলল। কিশোরী ছবি তোলা শেষে বইটি রেখে দিল যথাস্থানে। স্টলের বিক্রয়কর্মী জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপা, বই কিনবেন না?’ স্কুলছাত্রী মিষ্টি হেসে বিদায় নিল।
অমর একুশে বইমেলা ২০২৪-এর ১৭ দিন পেরোল গতকাল শনিবার। মেলার শুরু থেকেই বিভিন্ন স্টলে এমন দৃশ্য দেখা গেছে।
প্রকাশকদের মুখে চওড়া হাসি আছে বটে, তবে জনসমাগমের তুলনায় বিক্রি অনেকটা কম। পাঠক ও ক্রেতার চেয়ে মেলায় ঘুরতে আসা দর্শনার্থীর সংখ্যাই বেশি। একুশে বইমেলার চরিত্র অন্য মেলার মতো হওয়ার কথা নয়। বিশেষ করে এটি হওয়া উচিত লেখক ও পাঠকের সম্মিলন। অথচ দিন দিন হয়ে উঠছে ঘোরাফেরার আয়োজন।
জার্নিম্যান বুকস-এর স্টলে দাঁড়িয়ে পাঠককে নিজের সই করা বই দিচ্ছিলেন লেখক ফারুক মঈনউদ্দীন। বললেন, ‘মেলায় এত জনসমাগম কমানোর সময় এসেছে। এত উটকো লোক এখন ঢুকছে যে মেলার চরিত্র নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। বেশির ভাগই ছবি তুলে চলে যায়। এরা ফান করতে আসে। বইমেলা ফান করার জায়গা না। এখন আমি মনে করি, মেলায় ঢুকতে একটি প্রবেশ ফি ধার্য করা উচিত। তাহলে উটকো লোকের ঝামেলা থাকবে না।’
মেলায় ফারুক মঈনউদ্দীনের দুটি বই এসেছে। এর একটি ‘জাভা দ্বীপে র্যাঁবো, হারানো সমুদ্রাভিযান’। জেমি জেমসের লেখা বইটির ভাষান্তর করেছেন তিনি। বইটি নিয়ে বললেন, ফরাসি কবি আর্তুর র্যাঁবো ওলন্দাজ ঔপনিবেশিক সময়ে ইন্দোনেশিয়ার জাভা দ্বীপে যান। যাওয়ার সময় তিনি পালিয়েছিলেন। চার মাস তাঁর কোনো হদিস মেলেনি। সেই সময়ের কথা বলা হয়েছে বইটিতে।
জার্নিম্যান বুকস বাংলাদেশের ইন্টেরিয়র নিয়ে একটি বই এনেছে ‘হোমস অব বাংলাদেশ’ নামে। শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হকের মেয়ে নাজনীন হক মিমি বইটি লিখেছেন। তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশের একটি বাড়ির বাহির ও ভেতরের স্ট্রাকচার কেমন হতে পারে, সেটা নিয়ে লিখেছি। পাশাপাশি পঞ্চাশ, ষাট ও সত্তরের দশকে বাংলার বাড়ির ধরন কেমন ছিল, তার পর্যালোচনা করেছি। এখানে আমি তুলে ধরেছি আমাদের ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং ক্রমবিকাশ।’
ছুটির দিন থাকায় গতকাল মেলায় দর্শনার্থীর চাপ ছিল। তবে শুক্রবারের তুলনায় গতকাল বিক্রি ভালো হয়েছে। মাওলা ব্রাদার্সের বিক্রয়কর্মী মো. সাইফুল্লাহ বলেন, ‘গতকালের তুলনায় আজ (শনিবার) বিক্রি বেশি। শুক্রবার ঘোরাঘুরি করা লোকজনের ভিড় ছিল বেশি।’ কোন ধরনের পাঠক বেশি বই কিনছে জানতে চাইলে বলেন, ‘তরুণদের ছবি তোলার প্রতি ঝোঁক বেশি। মধ্যবয়সী বা পুরোনো পাঠক আমাদের বই বেশি কিনছেন।’
গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১৭১টি। এগুলোর মধ্যে বাংলা একাডেমি এনেছে নাসরীন জাহানের ‘নির্বাচিত উপন্যাস’, অন্যপ্রকাশ এনেছে হাসনাত আবদুল হাইয়ের ‘স্যাংগ্রিলায় সাতদিন’, ঐতিহ্য প্রকাশ করেছে সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী ও আবুল হাসনাত সম্পাদিত ‘নব্বুইয়ের অভ্যুত্থান’, কিংবদন্তি এনেছে মাসুম রেজার উপন্যাস ‘পুরুষ’, তরুণ কবি মালেক মুস্তাকিমের কবিতার বই ‘সেলাই করা হাওয়ার গান’। মোট নতুন বইয়ের তথ্য পাওয়া গেছে ১ হাজার ৭৯৫টির।
গতকাল মূলমঞ্চ ‘আমি লেখক বলছি’র পাশাপাশি ছিল শিশুপ্রহর। অনুষ্ঠিত হয় শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চূড়ান্ত পর্ব। এ ছাড়া বই সংলাপ ও রিকশাচিত্র মঞ্চের উদ্বোধন করা হয়।