চুয়াডাঙ্গায় বাণিজ্যিকভাবে চাষ হওয়া উচ্চফলনশীল জাতের কুলে (বরই) লাভের আশা করছেন চাষিরা। কুলবাগানগুলো পাকা-কাঁচা কুলে থোকায় থোকায় ভরে গেছে। বাজারে বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরী ও টক-মিষ্টি কুলের ব্যাপক চাহিদা থাকায় লাভের আশা তাঁদের। চাষিরা বলছেন, আড়তদারদের অনিয়মের কারণে বাগানমালিকেরা দাম কম পাচ্ছেন। আর সাধারণ ক্রেতাদের চড়া মূল্যে কুল কিনতে হচ্ছে। বাগানমালিক ও ক্রেতাদের মধ্যে কেনা-বেচার পার্থক্য থাকে প্রতি কেজিতে ৪০ থেকে ৫০ টাকা।
চুয়াডাঙ্গার দামুড়হুদা উপজেলার লোকনাথপুর গ্রামে প্রথম বাণিজ্যিকভাবে উচ্চফলনশীল জাতের কাশ্মীরি কুল চাষ শুরু হয়। এরপর জেলায় ছড়িয়ে পড়ে বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরী ও টক-মিষ্টি জাতের কুল চাষ। ৩৮৭ হেক্টর জমিতে প্রায় ৩শ কুলবাগান রয়েছে। চারটি জাতের কুল চাষ করা হয়। দেশের বিভিন্ন জেলায় চাহিদা রয়েছে এ জাতের কুলের। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, এ বছর ৩৮৭ হেক্টর জমির কুলবাগান থেকে প্রায় ৩ হাজার ৯৬ মেট্রিক টন ফল পাওয়া যাবে, যার বাজার মূল্য প্রায় সাড়ে ১০ কোটি টাকা।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, সদর উপজেলায় ৭০, আলমডাঙ্গায় ২৫, দামুড়হুদায় ১৭৪ এবং জীবননগর উপজেলায় ১১৮ হেক্টর জমিতে বল সুন্দরী, কাশ্মীরি, ভারত সুন্দরী ও টক-মিষ্টি জাতের কুল চাষ হয়েছে।
চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকার সাতগাড়ি গ্রামের কুলবাগানের মালিক শিমুল হোসেন পলক বলেন, ‘কালীগঞ্জ সীমান্ত থেকে বল সুন্দরী ৫০০ ও ভারত সুন্দরী ২০০টি চারা নিয়ে ২০২১ সালে আড়াই বিঘা জমিতে রোপণ করি। জমি তৈরি করা থেকে ফল আসা পর্যন্ত প্রায় ১ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। চারা রোপণের ৭ থেকে ৮ মাসেই গাছে কুল আসে। ইতিমধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকার কুল ও চারা বিক্রি করেছি।’ তিনি জানান, বল সুন্দরী কুল ১ হাজার ২০০ টাকা থেকে ১ হাজার ৩০০ টাকা ও ভারত সুন্দরী ২ হাজার ৪০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকা মণ দরে বেচাকেনা করছেন।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার বোয়ালমারী গ্রামের কুলবাগান মালিক মজিবুল হক বলেন, ‘আমরা কুলের দাম পাই না। আড়তদারেরা আমাদের কুল বিক্রি করে এক কেজিতে ৩০ থেকে ৪০ টাকা বেশি লাভ করেন। কিন্তু আমাদের দাম দেওয়া হয় ৩০ থেকে ৪০ টাকা। ফলে লাভ কম হয়, খরচ বাদে কোনো কোনো সময় লোকসানের মুখে পড়তে হয়।’ তিনি জানান, দেড় বিঘা জমিতে বল সুন্দরী ও দেড় বিঘা জমিতে কাশ্মীরি জাতের কুল চাষ করেছেন। বিঘাপ্রতি ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা খরচ হয়। খরচ বাদে ১ লাখ টাকা লাভ থাকে।
চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা নাসির আহমেদ জানান, চুয়াডাঙ্গা পৌর এলাকায় প্রায় দেড় হেক্টর জমিতে বিভিন্ন জাতের কুলের আবাদ হয়েছে। কুল চাষ লাভজনক হওয়ায় কৃষি উদ্যোক্তারা কুলের দিকে ঝুঁকছেন।
চুয়াডাঙ্গা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোহাম্মদ আলী জিন্নাহ বলেন, ‘জেলায় ৩৮৭ হেক্টর জমিতে কুল চাষ হচ্ছে। বাজারে কুলের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যাচ্ছে এ জেলার কুল। বাগানমালিক ও কৃষকদের কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের পক্ষ থেকে সব ধরনের সহযোগিতা করা হচ্ছে।’