চাহিদার শতভাগ বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে হবিগঞ্জ জেলার। এরপরও ঘন ঘন বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। বিশেষ করে পবিত্র রমজান মাস ও ঈদের আগ মুহূর্তে বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে ক্ষোভ দেওয়া দিয়েছে সাধারণ মানুষ ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে।
জেলা বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড সূত্রে থেকে জানা গেছে, হবিগঞ্জ পৌরসভা ও আশপাশের এলাকার পিডিবির গ্রাহকসংখ্যা প্রায় ৩৫ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ১৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ প্রয়োজন। যার শতভাগ উৎপাদন সক্ষমতা রয়েছে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের। এরপরও ঘন ঘন বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে গ্রাহকদের। দিনে ও রাতে কয়েকবার ঘটছে বিদ্যুৎবিভ্রাট। এতে তীব্র গরমে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
দীর্ঘদিন করোনায় বন্ধ থাকার পর শিক্ষার্থীরা লেখাপড়ায় মনোনিবেশ করলেও বিদ্যুৎবিভ্রাটের কারণে ব্যাঘাত ঘটছে। ঘন ঘন বিদ্যুতের আসা-যাওয়ার কারণে নষ্ট হচ্ছে টিভি-ফ্রিজসহ ছোট ছোট কলকারখানার বিভিন্ন যন্ত্রাংশ। সেই সঙ্গে প্রতিদিন নষ্ট হচ্ছে কর্মঘণ্টা। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, ঈদের আগ মুহূর্তে বিদ্যুতের এই সমস্যার কারণে ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হতে হচ্ছে তাঁদের।
শহরের অনন্তপুর এলাকার বাসিন্দা মো. সহিবুর রহমান বলেন, ‘আমার মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। দীর্ঘদিন করোনার কারণে স্কুল বন্ধ ছিল। যে কারণে ঠিকভাবে লেখাপড়া হয়নি। সামনে পরীক্ষা, অথচ বিদ্যুতের কারণে পড়তে পারছে না। পড়তে বসলেই বিদ্যুৎ থাকে না।’
শহরের শংকরের মুখ এলাকায় প্রিন্টিং প্রেস চালান পুলক দাশ। তিনি বলেন, ‘কিছুক্ষণ পরপরই কারেন্ট নিয়ে যায়। একবার মেশিন বন্ধ হলে আরেকবার ঠিকভাবে চালু হওয়ার আগেই আবার নিয়ে যায়। এতে আমাদের অনেক ক্ষতি হচ্ছে। মেশিনের অনেক যন্ত্রপাতি নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।’
শহরের তিনকোণাপুরুকপাড় এলাকার কাপড় ব্যবসায়ী আরিফ আহমেদ বলেন-‘ঈদের আগে কাপড় কিনতে মানুষ রাতেই বেশি আসেন। এখন দোকানে যখন ক্রেতাদের ভিড় থাকে তখন হঠাৎ করেই বিদ্যুৎ নিয়ে যায়। তখন কিছু লোক ক্রেতা সেজে দোকানে আসে। তারা কাপড় চুরি করে নিয়ে যায়।’
হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ গ্রাহক ফোরামের সাধারণ সম্পাদক শিবলী খান বলেন, হবিগঞ্জ বিদ্যুৎ উৎপাদনকারী জেলা। অথচ এই জেলায় কেন এত বিদ্যুৎবিভ্রাট? এর কারণ হচ্ছে অবৈধ সংযোগ। শহরে হাজারের ওপরে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ রয়েছে। এ ছাড়া ছয় বছর ধরে শুধু সাব স্টেশন নির্মাণ করা হবে বলা হচ্ছে। কিন্তু এখন নির্মাণ হয়নি। এ ছাড়া শহরে জরাজীর্ণ তারগুলোরও পরিবর্তনের কোনো উদ্যোগ নেই। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তা কর্মচারীদের উদাসীনতা এবং দুনীতির কারণে মানুষের এত ভোগান্তি।
বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন সরদার বলেন, অতিরিক্ত গরম এবং বৃষ্টি হলে লাইনে অনেক সময় সমস্যা সৃষ্টি হয়। এ সময় সেটি সংস্কারের জন্য সংযোগ বিচ্ছিন্ন করা হয়। এর বাইরে বিদ্যুৎবিভ্রাট হয় না।