মির্জাপুর উপজেলার বানাইল ইউনিয়নের গ্রামাটিয়া এসসি উচ্চবিদ্যালয়ে দপ্তরি পদে নিয়োগকে কেন্দ্র করে প্রধান শিক্ষক ও স্থানীয় এক যুবলীগ নেতার মধ্যে দ্বন্দ্ব দেখা দিয়েছে। এ দ্বন্দ্ব রূপ নিয়েছে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন ও সমাবেশে। এতে এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এ নিয়ে সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় বাসিন্দাদের।
এ ঘটনায় থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন অভিযোগকারী পরিতোষ সরকার। তবে অভিযোগ অস্বীকার করেছেন প্রধান শিক্ষক চন্দ্রমোহন বিশ্বাস।
এ বিষয়ে পরিতোষ সরকার বলেন, ‘আমাকে গ্রামাটিয়া এসসি উচ্চবিদ্যালয়ের দপ্তরি পদে চাকরি দেওয়ার কথা বলে প্রধান শিক্ষক চার কিস্তিতে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। এখন তিনি চাকরিও দিচ্ছেন না টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না।’
বানাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মাখন ও ইউনিয়ন যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলম জানান, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রমোহন বিশ্বাস গ্রামাটিয়া গ্রামের পরিতোষ সরকার নামে এক ব্যক্তির কাছ থেকে চাকরি দেওয়ার নামে ৬ লাখ টাকা নিয়েছেন। প্রধান শিক্ষক তাঁকে চাকরিও দিচ্ছেন না, টাকাও ফেরত দিচ্ছেন না বলে পরিতোষ সরকার থানায় লিখিত অভিযোগ করেছেন। বিষয়টি তাঁদের জানানো হলে তাঁরা মানববন্ধন করে সহযোগিতা করেছেন মাত্র।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রমোহন বিশ্বাস বলেন, ‘পরিতোষ সরকারের সঙ্গে আমার কোনো আর্থিক লেনদেন হয়নি। মিথ্যা অভিযোগ এনে গ্রামের লোকজনকে ভুল বুঝিয়ে আমার ও বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করা হচ্ছে।’
মির্জাপুর থানার উপপরিদর্শক (এসআই) ও তদন্তকারী কর্মকর্তা মো. মিনহাজ উদ্দিন জানান, পরিতোষ সরকার ও প্রধান শিক্ষক একে অপরের বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। বিষয়টি তদন্ত করে দেখা হচ্ছে।
মির্জাপুর উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. হারুন অর রশিদ বলেন, ‘অভিযোগকারী পরিতোষ সরকার ওই বিদ্যালয়ে দপ্তরি পদে চাকরির জন্য আবেদন করেননি। অতএব বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট কোনো বিষয় নিয়ে তাঁর সঙ্গে আলোচনার প্রশ্নই আসে না।’
এদিকে এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে পাল্টাপাল্টি মানববন্ধন সমাবেশ করা হয়েছে। গত শনিবার বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক চন্দ্রমোহন বিশ্বাসের বিরুদ্ধে বানাইল ইউনিয়ন যুবলীগের সভাপতি রেজাউল ইসলাম মাখনের নেতৃত্বে বিদ্যালয়ের সামনে মানববন্ধন করা হয়। এ সময় ওই ইউনিয়নের যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শাহীন আলম, ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিঠুন সরকার, ৩ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ও ইউপি সদস্য আনন্দ কুমার সরকারসহ অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
এরপর দিন প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ এনে মানববন্ধনের প্রতিবাদে গত রোববার বিকেলে বিদ্যালয়ের সামনে ঘণ্টাব্যাপী মানববন্ধন ও বিক্ষোভ সমাবেশ করেন বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সদস্য, অভিভাবক, শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা। এ সময় বক্তারা বলেন, ‘চন্দ্রমোহন বিশ্বাস একজন ভালো মানের শিক্ষক। তাঁর বিরুদ্ধে মিথ্যা অভিযোগ আনা হয়েছে। একটি মহল বিদ্যালয় ও প্রধান শিক্ষককে নিয়ে ষড়যন্ত্রে মেতেছে। আমরা তাঁদের শাস্তি দাবি করছি।’
উল্লেখ্য, ১৯২৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বিদ্যালয়টিতে মাঝালিয়া, ভূষুন্ডি, পাইকপাড়া, পানিশাইল, কদমতলী, দেওড়া, গ্রামাটিয়া, দুরপাশা ও দেওজানি গ্রামের চার শতাধিক শিক্ষার্থী লেখাপড়া করে।