সম্পাদকীয়
কিশোর কুমার ছিলেন একাধারে গায়ক, গীতিকার, সুরকার, অভিনেতা, চলচ্চিত্র পরিচালক, চিত্রনাট্যকার ও রেকর্ড প্রযোজক। তাঁর আসল নাম ছিল আভাস কুমার গঙ্গোপাধ্যায়। তিনি ১৯২৯ সালের ৪ আগস্ট ভারতের মধ্যপ্রদেশের খান্ডোয়ায় জন্মগ্রহণ করেন।
বড় ভাই অশোক কুমার ছিলেন বোম্বের একজন সফল অভিনেতা। কিশোর কুমারের কর্মজীবন শুরু হয় অশোকের হাত ধরে অভিনেতা হিসেবে। অভিনেতা হিসেবে তিনি বড় পর্দায় আসেন ‘শিকারি’ সিনেমার মাধ্যমে। ১৯৪৬ থেকে ১৯৫৫ সালের মধ্যে ২২টি সিনেমায় অভিনয় করেন। তাঁর মধ্যে ১৬টি সিনেমা ফ্লপ হয়। এরপর তিনি কয়েকটি সিনেমায় অভিনয়ের পর পুরোপুরি সংগীতজগতে চলে আসেন। তবে তাঁর সংগীতের প্রথাগত প্রশিক্ষণ ছিল না। প্রথম জীবনে তিনি কে এল সায়গলকে অনুকরণ করতেন। পরে শচীন দেববর্মনের পরামর্শে তিনি তাঁর নিজস্ব ভঙ্গিতে গান গাওয়া শুরু করেন। কিশোর কুমার বিভিন্ন ভারতীয় ভাষায় গান গেয়েছেন।
তার মধ্যে রয়েছে বাংলা, হিন্দি, মারাঠি, অসমিয়া, গুজরাটি, কন্নড়, ভোজপুরি, মালয়ালম, ওড়িয়া ও উর্দু। তবে তাঁর বাংলায় গাওয়া গানগুলো সর্বকালের ধ্রুপদি গান হিসেবে বিবেচিত হয়েছে। তিনি ২ হাজারের বেশি গান গেয়েছেন। কাজ করেছেন শচীন দেববর্মন, রাহুল দেববর্মন, গুলজার, গৌরীপ্রসন্ন মজুমদার, পুলক বন্দ্যোপাধ্য়ায়সহ আরও অনেক সংগীত পরিচালকের সঙ্গে।
কিশোর কুমার পরপর চারটি বিয়ে করেছিলেন। চারজনই ছিলেন জনপ্রিয় অভিনেত্রী। তাঁর প্রথম স্ত্রী রুমা গুহঠাকুরতা। দ্বিতীয় স্ত্রী ছিলেন মধুবালা। মধুবালাকে তিনি দুই রীতিতে বিয়ে করেছিলেন। একবার নায়িকার মুসলিম পরিবারের জন্য ধর্মান্তরিত হয়ে আবদুল করিম নাম গ্রহণ করে মুসলিম রীতি মেনে বিয়ে করেন, আরেকবার নিজের পরিবারের জন্য হিন্দু রীতিতে বিয়ে করেন। তাঁর তৃতীয় স্ত্রী যোগিতা বালি, চতুর্থজন লীনা চন্দভারকর। শোনা যায়, যোগিতা বালি তাঁকে ছেড়ে গেলে তিনি গান গাওয়া বন্ধ করে দেন।
কিংবদন্তি এই শিল্পী গেয়েছিলেন, ‘তোমার বাড়ির সামনে দিয়ে আমার মরণ যাত্রা যেদিন যাবে’। তাঁর সেই মরণযাত্রা হয় ১৯৮৭ সালের ১৩ অক্টোবর।