প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সফরে যাচ্ছেন আজ সোমবার সকালে। বৈশ্বিক ও আঞ্চলিক ভূরাজনীতিতে দেশটির প্রবল প্রতিদ্বন্দ্বী ভারত ঘুরে আসার দুই সপ্তাহের মধ্যেই বেইজিং যাচ্ছেন তিনি। এ জন্য এবারের সফরের দিকে নজর বেশি, আলোচনাও হচ্ছে বেশি।
বিশ্লেষকেরা মনে করছেন, চীন ও ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের বিষয়গুলো পাল্টাপাল্টি হিসেবে একসঙ্গে না দেখে আলাদা করে ভাবা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক হতে পারে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিং, প্রধানমন্ত্রী লি শিয়াংয়ের সঙ্গে শেখ হাসিনা বৈঠক করবেন। অর্থনৈতিক ও ব্যাংকিং খাত, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ, ডিজিটাল অর্থনীতি, দুটি বড় সেতুসহ অবকাঠামোগত উন্নয়ন ও বাংলাদেশ থেকে চীনে কৃষিপণ্য রপ্তানিসহ বিভিন্ন বিষয়ে প্রায় ২০টি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) এবার সই হতে পারে।
গতকাল রোববার ঢাকায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে সংবাদ সম্মেলনে হাছান মাহমুদ এসব কথা জানান। দেশে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ও বাজেট ঘাটতির মুখে চীনের কাছ থেকে সহায়তা পাওয়া নিয়ে আলোচনা হবে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাজেট সহায়তা নয়। ঋণের কোনো পরিমাণ নিয়েও কথা হচ্ছে না। অর্থনৈতিক সহযোগিতার বিষয়ে একটি স্মারক সই হবে। এই স্মারকের ভিত্তিতে ভবিষ্যতে প্রয়োজন অনুযায়ী ব্যাংকিং ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা নেওয়া যাবে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার গত সপ্তাহে ব্লুমবার্গকে এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, রিজার্ভ বাড়াতে এবং চীনের কাছ থেকে কেনাকাটার জন্য সহায়তা হিসেবে সরকার ৫০০ কোটি (পাঁচ বিলিয়ন) ডলারের সমপরিমাণ চীনা মুদ্রা চেয়েছে।
তিস্তা ব্যবস্থাপনা প্রকল্প নিয়ে আলোচনা হবে কি না, এমন প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, তিস্তা বাংলাদেশ ও ভারতের যৌথ নদী। ভারত ও চীন দুই দেশই প্রস্তাব দিলেও যৌথ নদী বিবেচনায় ভারতের প্রস্তাব প্রথমে বিবেচনা করতে হবে। ভারত এরই মধ্যে একটি কারিগরি দল পাঠানোর কথা বলেছে। বাংলাদেশ ও ভারতের কারিগরি দল একসঙ্গে সমীক্ষা করে কী করা প্রয়োজন, তা নির্ধারণ করবে। চীন এবারের সফরে তুললে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হবে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে একটি সমুদ্রবন্দরকে কেন্দ্র করে উন্নয়ন বলয় গড়ে তোলার বিষয়ও বেইজিংয়ে আলোচনায় আসতে পারে।
নয়াদিল্লি থেকে আসার ১৫ দিনের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী বেইজিং যাচ্ছেন। ফলে বিষয়টি নিয়ে বেশ কথা হচ্ছে। গতকাল সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ এন্টারপ্রাইজ ইনস্টিটিউটের প্রেসিডেন্ট এম হুমায়ুন কবির আজকের পত্রিকাকে বলেন, ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের টানাপোড়েনের অংশ হলে বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকি আছে। এমন ঝুঁকি সামাল দেওয়ার সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। তিনি বলেন, ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কে নিরাপত্তা ও অর্থনৈতিক স্বার্থের দিকগুলো দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। আর আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকা ভারতের জন্য রাজনৈতিক দিক থেকে লাভজনক।
যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের সাবেক এই রাষ্ট্রদূত মনে করেন, চীনের কাছে কৌশলগত, অর্থনৈতিক ও কূটনৈতিক দিক থেকে বাংলাদেশের গুরুত্ব আছে।
অর্থনৈতিক, প্রযুক্তিগত ও শিল্পের দিক থেকে চীন বাংলাদেশের নির্ভরতার বড় জায়গা। তিনি মনে করেন, ভূরাজনৈতিক কারণে যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতের স্বার্থ প্রায় অভিন্ন বলে চীনের সঙ্গে সম্পর্কের আলোচনায় এ দুটি দেশের (ভারত ও যুক্তরাষ্ট্র) প্রসঙ্গ এসে যায়। তবে আলাদা করে আলোচনা করা বাংলাদেশের জন্য মঙ্গলজনক।
প্রধানমন্ত্রীর সফরসঙ্গীদের মধ্যে আছেন অর্থমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী, পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান, কয়েকজন প্রতিমন্ত্রী ও সচিব। শীর্ষ ব্যবসায়ীদের একটি প্রতিনিধিদল প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বেইজিং যাবে। প্রধানমন্ত্রী সেখানে ব্যবসা ও বিনিয়োগ বিষয়ে একটি সম্মেলনেও যোগ দেবেন।
শেখ হাসিনা আগামী বৃহস্পতিবার দেশে ফিরবেন।