রাসেল আহমেদ, তেরখাদা (খুলনা)
খুলনার তেরখাদা উপজেলা বিএনপি এখন চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। উপজেলা কমিটির সভাপতি চৌধুরী কওছার আলী, সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন, যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফকরুল ইসলাম বুলু ও সাবেক সহসভাপতি শরিফ নাঈমুল হকের নেতৃত্বে নিজস্ব পক্ষ রয়েছে। একই দলের নেতা-কর্মী হলেও এক পক্ষ আরেক পক্ষের সদস্যদের মুখ দেখাদেখি পর্যন্ত বন্ধ করে দিয়েছে। এদিকে বিএনপির সাংগঠনিক দুর্বলতা কাজে লাগিয়ে সরকারি দল আওয়ামী লীগ রয়েছে শক্ত অবস্থানে।
জানা গেছে, দীর্ঘদিনের অভ্যন্তরীণ কোন্দল কোনোভাবেই পিছু ছাড়ছে না তেরখাদা উপজেলা বিএনপির রাজনীতির। প্রায় চার বছর ধরে বিএনপিতে চলছে দ্বিধাবিভক্তি। মূল দলের কোন্দলের রেশ ছড়িয়েছে দলটির সব অঙ্গসংগঠনেও। অবিলম্বে এ বিরোধ নিরসনে কেন্দ্রীয় ও জেলার নেতাদের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা।
ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতাদের সমন্বয়ে উপজেলা কমিটি গঠনের দাবি তাঁদের।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, ২০১৮ সালের ২৯ আগস্ট চৌধুরী কওছার আলীকে সভাপতি ও মো. রবিউল হোসেনকে সাধারণ সম্পাদক করে ১৬ সদস্যের আংশিক কমিটি ঘোষণা করেন জেলা নেতারা। কওছার আলী জেলার কর্মসূচিতে অংশ নিলেও সাধারণ সম্পাদক রবিউল হোসেন অংশ নিচ্ছেন না। রবিউল যুক্তরাজ্য বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক পারভেজ মল্লিকের অনুসারী। কওছার আলী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা আজিজুল বারী হেলালের অনুসারী।
এদিকে যুগ্ম সম্পাদক চৌধুরী ফকরুল ইসলাম বুলুর নেতৃত্বে রয়েছে পৃথক পক্ষ। সাবেক সহসভাপতি শরিফ নাঈমুল হকের নেতৃত্বে বিএনপির কেন্দ্রীয় সাবেক নেতা শরিফ শাহ কামাল তাজের অনুসারীও রয়েছেন তেরখাদায়। এভাবে এক উপজেলাতেই বিএনপি চার ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে। পক্ষ নিয়ন্ত্রণকারী নেতারাও তাঁদের গ্রুপিংয়ের কথা স্বীকার করেছেন।
এই অবস্থায় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা পড়েছেন বিপাকে। উপজেলা বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, বিএনপির এই অবস্থা দুঃখজনক। তিনি দলের এই অবস্থার জন্য টাকা দিয়ে পদ দখল করা বিতর্কিত এক নেতাকেই দায়ী করে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।
দলের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নেতৃত্বপ্রত্যাশীদের মধ্যে রয়েছে চাপা বিরোধ। যেকোনো সময়ে ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ। এর মধ্যে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলছেন তেরখাদা বিএনপির শীর্ষস্থানীয় কয়েকজন নেতা। আবার নিজস্ব নেতা-কর্মী না থাকলেও বড় পদে আসার স্বপ্ন দেখছেন কেউ কেউ। এ ছাড়া তৃণমূলের নেতা-কর্মী না থাকলেও টাকা দিয়ে নেতৃত্বে আসার পাঁয়তারা চালাচ্ছেন একজন।
অন্যদিকে, মাদক, চুরি, নানা অভিযোগসহ বিতর্কের শেষ নেই এমন ব্যক্তিও তেরখাদা উপজেলা বিএনপির গুরুত্বপূর্ণ পদে আসতে জোর তদবির চালাচ্ছেন। জেলা বিএনপির আহ্বায়ক আমীর এজাজ খান বলেন, বিএনপি বৃহৎ রাজনৈতিক দল, বড় দলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে কিছুটা দ্বন্দ্ব থাকা স্বাভাবিক। সংগঠনের স্বার্থে দ্রুত নেতা-কর্মীদের সঙ্গে কথা বলে এ সমস্যা সমাধানের উদ্যোগ নেওয়া হবে।
কেন্দ্রীয় বিএনপির তথ্যবিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেছেন, বড় দলে বিভক্তি থাকতে পারে, কিন্তু আন্দোলন-সংগ্রামে সবাই ঐক্যবদ্ধ। এটি কোনো সমস্যা নয়। নতুন কমিটি হলে সব ঠিক হয়ে যাবে।