সম্পাদকীয়
সেনাবাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত মেজর সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যা মামলার রায় ঘোষণা করা হয়েছে। কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ ইসমাইল গত সোমবার এ রায় ঘোষণা করেন। পুলিশের বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ এবং বাহারছড়া পুলিশ ফাঁড়ির পরিদর্শক লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়েছে। এ মামলায় অভিযুক্ত আরও ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। সাতজনকে খালাস দেওয়া হয়েছে।
২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে শামলাপুর তল্লাশিচৌকির সামনে গাড়ি থামিয়ে অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা সিনহাকে গুলি করে হত্যা করা হয়। গুলি করেন বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের তৎকালীন পরিদর্শক লিয়াকত আলী। সিনহা হত্যার ঘটনাটি ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হয়েছিল।
২০২০ সালের ৫ আগস্ট আদালতে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন। মামলায় টেকনাফ থানার তখনকার ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ পুলিশের ৯ সদস্যকে আসামি করা হয়।
হত্যা মামলার তদন্ত শেষে ২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ১৫ জনের বিরুদ্ধে কক্সবাজার আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় র্যাব। আসামিদের মধ্যে ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। ২০২১ সালের ২৭ জুন ১৫ আসামির বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠনের মধ্য দিয়ে মামলার বিচার শুরু হয়।
তথ্যচিত্র নির্মাণের জন্য সঙ্গীদের নিয়ে কক্সবাজারে গিয়েছিলেন সিনহা। মাদকবিরোধী অভিযানের নামে টাকার জন্য বন্দুকযুদ্ধ সাজিয়ে অনেককে খুন করার অভিযোগ ছিল ওসি প্রদীপের বিরুদ্ধে। সিনহার টিম এসবের অনেক তথ্য জেনে গিয়েছিলেন বলে প্রদীপের পরিকল্পনায় সিনহাকে হত্যা করা হয়েছিল।
আদালত রায়ে বলেছেন, সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যার উদ্দেশ্যে টেকনাফ থানার তৎকালীন ওসি প্রদীপ কুমার দাশ অপর আসামিদের সঙ্গে অপরাধমূলক ষড়যন্ত্র করেন। তিনি পূর্ব সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অপর আসামিদের সহায়তায় সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খানকে হত্যা করেন, বুকে লাথি মেরে পাঁজরের দুটি হাড় ভেঙে, গলা চেপে মৃত্যু নিশ্চিত করেন।
আসামি লিয়াকত সম্পর্কে আদালত বলেন, প্রদীপ কুমার দাশের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে সিনহাকে উপর্যুপরি গুলি করেন আসামি লিয়াকত আলী। মৃত্যু নিশ্চিত করতে সিনহাকে দেরিতে হাসপাতালে নিয়ে যান। ঘটনা ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করতে এবং হত্যার আলামত ধ্বংস করতে সিনহা ও তাঁর সঙ্গী সিফাতের বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে লিয়াকত শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।
অপরাধীদের শাস্তি হওয়া স্বস্তিকর। অপরাধ দমনের দায়িত্ব যাঁদের হাতে, তাঁরা অপরাধে জড়িয়ে পড়লে মানুষের অসহায়ত্ব বাড়ে। দেশে আইন আছে। কিন্তু আইন কার্যকর না হওয়ার অভিযোগও কম নয়। সিনহা হত্যা মামলার প্রধান দুই আসামির সর্বোচ্চ সাজা হলেও সাত আসামি খালাস পাওয়ায় বাদীপক্ষের প্রত্যাশা পুরোপুরি পূরণ হয়নি। যাঁদের মৃত্যুদণ্ড হয়েছে, তাঁদের রায় কার্যকর হলেই তাঁরা সন্তুষ্টি প্রকাশ করবেন।