কাপাসিয়া (গাজীপুর) প্রতিনিধি
গাজীপুরের কাপাসিয়ায় রেশম উন্নয়ন বোর্ডের (বিএসডিবি) প্রশিক্ষণ নিয়ে রেশম চাষ করছেন ৩১ জন নারী। ২০ বছর ধরে রেশম চাষ করে স্বাবলম্বী হয়েছেন তাঁরা। তবে এত দিনেও ওই এলাকায় চাষির সংখ্যা বাড়েনি। তুঁতগাছের স্বল্পতা, গুটির স্বল্পমূল্যসহ নানা কারণে রেশম চাষের বিস্তার হচ্ছে না।
বিএসডিবির কাপাসিয়া উপজেলার রেশম সম্প্রসারণের ম্যানেজার, কাপাসিয়ায় ৩১ জন রেশমচাষিকে উন্নত রেশমগুটি তৈরির জন্য প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। রেশম পোকার খাবারের জন্য তুঁতগাছ বিনা মূল্যে দেওয়া হয়। কিন্তু প্রতিবছর নতুন উদ্যোক্তা পাচ্ছেন না, তুঁতগাছের স্বল্পতার কারণে বৃদ্ধি করা যাচ্ছে না।
জানা গেছে, প্রায় ২০ বছর আগে উপজেলার বড়হড় গ্রামে খালের দুই পাশে প্রায় ৫ কিলোমিটার জায়গাজুড়ে লাগানো হয়েছিল তুঁতগাছ। এসব গাছের পাতাগুলো রেশম পোকার খাবার হিসেবে ব্যবহার করেন চাষিরা। তাঁরা বলেছেন, একেকটি তুঁতগাছ ২০ থেকে ২২ বছর পর্যন্ত বাঁচে। তুঁতগাছগুলো অনেকেই নষ্ট করে ফেলে। তাই সরকারি উদ্যোগে এগুলো পাহারার ব্যবস্থা করা প্রয়োজন।
উপজেলার বড়হড় গ্রামে আট বছর ধরে রেশম চাষ করেন জায়েদা। ৬০০ ডিম থেকে উৎপাদিত রেশম পোকা ১০টি মাচায় পালন করছেন। কিছুদিন পরেই গুটি দিতে শুরু করবে পোকাগুলো। পোকার খাওয়ার জন্য বাড়ির পাশে খালের দুই পাড়ে তুঁতগাছ রয়েছে। গাছে এখন প্রচুর পাতা। এই আবহাওয়া পোকার বৃদ্ধির জন্য উপযুক্ত সময়।
জায়েদা বলেন, ‘কিছুদিন পরেই তুঁতগাছের পাতা কমে যাবে, তখন পোকার খাদ্যসংকটে রেশমগুটিও সংগ্রহ কমে যায়।’
রেশমচাষি রীতা রানী বলেন, ‘বহুদিন ধরে রেশম চাষ করছি। রেশমগুটির দাম বেশি পাওয়া গেলে লাভ আরও বেশি হতো। সবার আগ্রহ বাড়ত। অনেকেই এখন আগ্রহ হারিয়ে ফেলছেন রেশম চাষে। নতুন করে রেশম চাষে কেউ আসতে চাচ্ছে না।’
বড়হড় এলাকায় রেশমচাষি শিল্পী রানী, রীতা রানী ও জায়েদার সাফল্য দেখে উদ্বুদ্ধ হয়েছেন শিমলী রানী, রিপা রানী, চিত্রা রানী, সীমা রানী, পার্বতী রানী, বীনা রানীসহ অনেক নারী। তাঁদের উৎপাদিত রেশমগুটি যাচ্ছে বেনারসিপল্লিতে। গুটি থেকে তৈরি হচ্ছে পোশাকসহ বিভিন্ন ধরনের পণ্য।
চাষিরা জানান, বছরে চারবার রেশম চাষ করা যায়। প্রতিবার ১৫-২০ হাজার টাকা আয় হয়। ডিম থেকে গুটি হওয়া ও বিক্রি পর্যন্ত ২৭ দিন সময় লাগে। প্রতিদিন খাবার হিসেবে রেশম পোকাকে তুঁতপাতা দিতে হয়।
আলাপচারিতায় রেশমচাষিরা বলেন, তাঁদের উৎপাদিত রেশমগুটি সর্বশেষ ৪০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেছেন। আগের বছর দাম কিছুটা কম পেয়েছেন। রেশমগুটি প্রতি কেজি বিক্রি করে বর্তমানে মূল্য পাওয়া যায়, তা অনেক কম।
বিএসডিবির কাপাসিয়া উপজেলার রেশম সম্প্রসারণের ম্যানেজার মো. জহুরুল আলম বলেন, ‘জমিস্বল্পতার কারণে তুঁতগাছ লাগানো যাচ্ছে না। যদি খালি জমি পাওয়া যায়, আর ওই জায়গায় যদি তুঁতগাছ চাষ করা যায়, তাহলে রেশম পোকার খাবারের স্বল্পতা দূর করা সম্ভব।’
জহুরুল আলম আরও বলেন, ‘বোর্ড থেকে দু-তিন বছরের গড় মূল্যের ওপর একটি মূল্য নির্ধারণ করা হয়। এখানে কম-বেশি নেওয়া বা দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই।
ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এই খাতে উন্নয়নের জন্য চাষিদের রেশমগুটি বিক্রিতে মূল্যবৃদ্ধির বিষয়টি বিবেচনা করে উদ্যোগ নেবে।’