নওগাঁর আত্রাইয়ে প্রায় আট বছর ধরে পায়ে শিকল পরিয়ে বন্দী করে রাখা হয়েছে এনামুল হক প্রামাণিক (৩৬) নামের মানসিক ভারসাম্যহীন এক যুবককে। এনামুল মুক্ত থাকলে অন্যের ক্ষতি করতে পারেন-এমন আশঙ্কায় তাঁকে এভাবে বন্দী রেখেছে তাঁর পরিবার। আর্থিক দীনতার কারণে এ যুবকের চিকিৎসাও করাতে পারছে না পরিবার।
শিকলবন্দী এনামুল উপজেলার আহসানগঞ্জ ইউনিয়নের সিংসাড়া গ্রামের বাসিন্দা।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও এনামুলের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৪ সালে গভীর রাতে ঘুমের মধ্যে হঠাৎ চিৎকার দিয়ে ওঠেন এনামুল। তখন থেকেই অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এর কিছুদিন পর থেকে তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে পড়েন। প্রাথমিক পর্যায়ে কবিরাজ ও পরে ডাক্তারের মাধ্যমে চিকিৎসা করেও তাঁকে সুস্থ করা যায়নি। একপর্যায়ে অবস্থা আরও খারাপ হয়ে পড়ে তাঁর। বাড়ির সদস্যরাসহ আশপাশের লোকজনকে মারধর ও অস্বাভাবিক আচরণ শুরু করেন তিনি। তখন থেকেই তাঁকে তাঁর বাড়ির উঠানে একটি আমগাছের সঙ্গে লোহার শিকল দিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে।
জানা গেছে, অন্যদের মতো স্বাভাবিক জীবন ছিল এনামুলের। মানসিক ভারসাম্যহীন হওয়ার পর তাঁর স্ত্রীও তাঁকে ছেড়ে চলে গেছেন। এনামুলের বাবা নূরুল হক প্রামাণিকও তাঁর মাকে ছেড়ে অন্যত্র বিয়ে করেছেন। তার পর থেকে স্থানীয় এক ব্যক্তির জমিতে টিন ও মাটির তৈরি টালি ঘরে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। অর্থাভাবে এনামুলের চিকিৎসাও বন্ধ হয়েছে অনেক আগেই। এখন শিকলবন্দী জীবন তাঁর।
এনামুলের মা রমিছা বিবি বলেন, আট বছর ধরে তাঁর ছেলে মানসিক ভারসাম্যহীন। ডাক্তারি চিকিৎসাতেও সুস্থ হয়নি। সংসারের অভাব-অনটনের কারণে উন্নত চিকিৎসা করাতে পারছেন না। তিনি আরও বলেন, নিরুপায় হয়ে চোখের সামনেই প্রতিনিয়ত ছেলের বন্দিদশা দেখতে হয়। সরকার বা বিত্তবান কেউ একটু চিকিৎসার জন্য সাহায্য করত, তাহলে এনামুল হয়তো সুস্থ হয়ে উঠত।
আত্রাই উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. ইকতেখারুল ইসলাম বলেন, এনামুলের বিষয়ে জেনেছেন তিনি। পাবনা মানসিক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের সঙ্গে তাঁদের কথা হয়েছে। সেখানে বর্তমানে শয্যাসংকট রয়েছে। তাঁর চিকিৎসার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।