বদলাচ্ছে সময়। বদলেছে প্রকৃতির রূপ। উজাড় হয়েছে বন, বাগান। এতে হারিয়েছে বন্য পশুপাখির আবাসস্থল। প্রকৃতির সঙ্গে না পেরে বিপন্ন হয়েছে পাখপাখালি। এতে নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য। তবে এই ভারসাম্য রক্ষায় ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলার সিড্যা ইউনিয়নের নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল হাদী জিল্লু। তিনি পাখির জন্য গাছে গাছে বসিয়েছেন হাঁড়ি। প্রাকৃতিক দুর্যোগের হাত থেকে রক্ষা করতে পাখির জন্য তৈরি করছেন নিরাপদ কৃত্রিম আবাসস্থল। ‘প্রকৃতির পাখি প্রকৃতিতেই থাকুক স্বাধীনভাবে’ স্লোগান নিয়ে তিনি এ কাজ শুরু করেছেন।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, বিভিন্ন প্রজাতির দেশীয় পাখি রক্ষায় এমন উদ্যোগ নিয়েছেন সিড্যা ইউনিয়নের এই চেয়ারম্যান। তাঁর এ কাজে সহযোগিতা করছেন ওই ইউনিয়নের ইউপি সদস্য, গ্রাম পুলিশ ও গ্রামবাসী। প্রাকৃতিক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করতে পাখিদের নিরাপদ আবাসস্থল ও বংশবিস্তারের লক্ষ্যে গাছে গাছে টাঙিয়েছেন হাঁড়ি।
সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, গাছে গাছে পাখির জন্য হাঁড়ি বাঁধা হয়েছে। হাঁড়িগুলোতে ছোট একটি ছিদ্র রয়েছে, যাতে বৃষ্টির পানি জমতে না পারে। তা ছাড়া হাঁড়ির বড় একটি মুখ রয়েছে পাখির ভেতরে ঢোকার জন্য। সিড্যা ইউনিয়নের আশপাশের গাছগুলোতে এ ধরনের শতাধিক হাঁড়ি বসানো হয়েছে।
পৌরসভার দক্ষিণ ডামুড্যা গ্রামের পাখিপ্রেমী কাজী গোলাম রাব্বি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘পাখি আমাদের পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা করতে সহায়তা করে। কিন্তু বর্তমানে পরিবেশ বিপর্যয়ের কারণে আমাদের ধরণি থেকে অনেক পাখি হারিয়ে যাচ্ছে। তাই আমরা যদি একটু সচেতন হই এবং জিল্লু চেয়ারম্যানের মতো করে বাড়ির প্রতিটি গাছে পাখিদের জন্য আবাসস্থল তৈরি করে দিই, তাহলে দেশ হবে পাখির দেশ, গানের দেশ, সোনার বাংলাদেশ।’
সিড্যা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সৈয়দ আব্দুল হাদী জিল্লু আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘এখন পাখিদের প্রজননের সময়। কিন্তু আমাদের এখানে বড় গাছের সংকট। হাঁড়ি দেওয়ার কারণে ঝড়, বৃষ্টি ও রোদ থেকে পাখিরা রক্ষা পাবে। হাঁড়িগুলোতে বাসা বেঁধে পাখিরা বংশবিস্তার করবে এবং আমার বিশ্বাস, আমাদের ইউনিয়ন হবে প্রাকৃতিক পাখির একটি অভয়াশ্রম।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা এফ এম এ মালেক বলেন, ‘যত দূর জানি, বেশ কয়েকটি সংগঠন পাখি সংরক্ষণে কাজ করছে। কিন্তু ব্যক্তিপর্যায়ে পাখি সংরক্ষণের কাজ খুবই কম। তবে ডামুড্যা উপজেলার সিড্যা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সৈয়দ আবদুল হাদী জিল্লুকে ধন্যবাদ দেব। কারণ, তিনিই প্রথম ব্যক্তিগত উদ্যোগে দেশীয় পাখি সংরক্ষণের জন্য এগিয়ে এসেছেন। তাঁর এ কাজে যদি কোনো সাহায্য-সহায়তা প্রয়োজন হয়, তা দেওয়ার জন্য সব সময় প্রস্তুত। তাঁর এ কাজের মাধ্যমে আগামী প্রজন্ম দেশীয় পাখি দেখতে পাবে, পাখিদের মধুর কণ্ঠে গান শুনতে পাবে।’