সম্পাদকীয়
ভাষাশহীদদের মধ্যে শুধু আবুল বরকতই ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র।
আবুল বরকত ছিলেন মৌলভি শামসুদ্দীন ও হাসিনা খাতুন দম্পতির ছেলে। ছিলেন তিন বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে চতুর্থ। বড় তিন বোন ও ছোট এক ভাই ছিলেন তাঁর।
১৯৪৮ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে রাষ্ট্রবিজ্ঞানে অনার্স কোর্সে ভর্তি হন। থাকতেন পুরানা পল্টনের বিষ্ণুপ্রিয়া ভবনে মামার বাড়িতে।
একুশে ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় যখন লাঠিচার্জ আর কাঁদানে গ্যাসে বিপর্যস্ত, তখন সেই আক্রমণ থেকে বাঁচার জন্য বরকত মেডিকেল ব্যারাকের দিকে চলে এলেন।
বরকত ছিলেন ১২ নম্বর ব্যারাকের বারান্দায় দাঁড়িয়ে। পুলিশ গুলি ছুড়লে সেখানেই লুটিয়ে পড়েছিলেন বরকত। তাঁকে হাসপাতালে নিয়ে যান শামসুল বারী মিয়া মোহন এবং মেডিকেল কলেজের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র শফিকুর রহমান।
শামসুল বারী মিয়া মোহন ঘটনাটির বর্ণনা দিয়েছিলেন এভাবে, ‘২০ নম্বর ব্যারাকের মাঝে মাঝে কামরার বারান্দায় দাঁড়িয়ে জিরোচ্ছিলাম। আমার দিকে এগিয়ে এলেন বরকত। ডাকলাম “আবাই”। বীরভূম জেলার সউড়ির সৈয়দ জাকির সাহেবের আত্মীয়, জাকির সাহেবের ফরিদপুরের চাকরিকালে আবাই মামুর সাথে পরিচয়। আমাকে দেখেই এগিয়ে এলেন, কিন্তু পড়ে গেলেন সাথে সাথে আমার হাতখানেক দূরে। পুলিশ ঢুকে পূর্ব থেকে সোজা গুলি ছুড়ছে। শফিকুর রহমান ১৭ নম্বরে থাকতেন, দৌড়ে এসে পানি ঢেলে দিলেন। পানির সাথে সাথে রক্ত দেখা দিয়েছে বারান্দার মেঝেতে। তলপেটে লেগেছে গুলি। তখন তার দুই ঠ্যাং শফিকুর রহমান কাঁধে তুলে নিলেন আর মাথা নিলাম আমার কাঁধে।…বরকত বলছিল, “খুব কষ্ট হচ্ছে, বাঁচব না। বিষ্ণুপ্রিয়া ভবন পুরানা পল্টনে সংবাদ পৌঁছে দিন।”’
বরকতকে বাঁচানো যায়নি। রাত ৮টা ১৫ মিনিটের দিকে বরকত মারা যান।
একুশে ফেব্রুয়ারি রাত ১০টার দিকে কড়া পুলিশি পাহারায় ঢাকার আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদ বরকতকে কবর দেওয়া হয়।
সূত্র: মিয়া মোহন, এম আর মাহবুব, একুশের অমর ভাষাশহীদ, গৌরব প্রকাশন, ২০১৭, পৃষ্ঠা ৪৮-৫১