শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জে ঠিকাদারের গাফিলতিতে তিন বছরেও শেষ হয়নি মনোয়ারা সিকদার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণকাজ। পুরাতন ভবনে জরাজীর্ণ কক্ষে ঝুঁকি নিয়ে চলছে পাঠদান। বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরকে লিখিতভাবে জানিয়েও সুফল পাচ্ছে না বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ।
মনোয়ারা সিকদার বালিকা উচ্চবিদ্যালয় ও শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, শরীয়তপুরের ভেদেরগঞ্জ উপজেলার মনোয়ার শিকদার বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৩০ জন। জরাজীর্ণ পুরাতন ভবন হওয়ায় ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বিদ্যালয়ে একটি ঊর্ধ্বমুখী দ্বিতল ও তিনতলা ভবন নির্মাণের উদ্যোগ নেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। ভবন দুটি নির্মাণের জন্য ১ কোটি ১৮ লাখ ৪২ হাজার ২৩২ টাকা বরাদ্দ করা হয়। টেন্ডার প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে ২০১৯ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইলিয়াস আহমেদ কনস্ট্রাকশনকে কার্যাদেশ দেয় শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর। এরপর কেটে গেছে তিন বছরের বেশি সময়। তবে এখনো নির্মাণকাজ শেষ করতে পারেনি ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। ৬০ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হলেও এখনো বাকি ৪০ শতাংশ কাজ। ফলে ভোগান্তিতে রয়েছেন ওই বিদ্যালয়ের শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।
সরেজমিনে বিদ্যালয়ে গিয়ে দেখা গেছে, জরাজীর্ণ ঝুঁকিপূর্ণ ভবনে এবং একটি টিনশেডের কক্ষে গাদাগাদি করে ক্লাস করছে শিক্ষার্থীরা। ধূলিকণা আর তীব্র গরমে অতিষ্ঠ শিক্ষার্থীদের পাঠদান করছেন শিক্ষকেরা। স্কুলের মাঠ ও শ্রেণিকক্ষের সামনে পড়ে আছে নির্মাণসামগ্রী। অনেকটা ঝুঁকি নিয়েই বিদ্যালয়ে যাতায়াত করছে শিক্ষার্থীরা।
বিদ্যালয়ের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী মিম আক্তার বলে, ‘এত দিনেও জরাজীর্ণ ভবন নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় গাদাগাদি করে ক্লাস করছি। একটি টিনশেডের রুমে ক্লাস হচ্ছে। রুমের জানালা নেই, ফ্যান নেই, প্রচণ্ড গরমে খুবই কষ্ট হয়। ঝড়বৃষ্টি হলে মাথার ওপর পানি পড়ে; বই-খাতা ভিজে নষ্ট হয়ে যায়। আমাদের অনেক সমস্যা হচ্ছে। তাই দ্রুত ভবন নির্মাণের কাজ শেষ করার দাবি জানাচ্ছি।’
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘জরাজীর্ণ পুরাতন টিনশেড কক্ষে ক্লাস নিতে আমাদের অনেক কষ্ট হচ্ছে। মাঠে নির্মাণসামগ্রী রাখায় ছাত্রীরা খেলাধুলাও করতে পারছে না, পাশাপাশি দুর্ঘটনার আশঙ্কাও রয়েছে। আমি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত ভবন নির্মাণকাজ শেষ করার জন্য বারবার অনুরোধ করছি। বিষয়টি শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। কোনো সমাধান পাচ্ছি না।’
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদের সভাপতি মো. জসিম উদ্দিন বলেন, ‘সমস্যা উত্তরণে আমি ঠিকাদারকে কয়েক দফা লিখিত অভিযোগসহ ফোন করেছি, কিন্তু কোনো ফল পাচ্ছি না। চার বছরেও ভবন নির্মাণকাজ শেষ না হওয়ায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা চরম ভোগান্তিতে রয়েছে।’
বিষয়টি নিয়ে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স ইলিয়াস আহমেদ কনস্ট্রাকশন কর্তৃপক্ষের সঙ্গে মোবাইল ফোনে একাধিক বার যোগাযোগের চেষ্টা করেও তাঁদের কাউকে পাওয়া যায়নি।
জেলা শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রকৌশলী এ টি এম জাহিদ বলেন, সঠিক সময়ে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি কাজ হস্তান্তর না করায় জরিমানা করা হয়েছে। ওই প্রতিষ্ঠানকে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে বন্ধ থাকা কাজ শুরু করে দ্রুততম সময়ের মধ্যে শেষ করতে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।