দেশে গত পাঁচ বছরে গবাদিপশুর সংখ্যা বাড়লেও দুধের ঘাটতি রয়েই গেছে। গত অর্থবছরে ২ কোটি ৮ লাখ ৬১ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে দুধ উৎপাদন হয়েছে ১ কোটি ৩০ লাখ ৭৪ হাজার টন। ঘাটতি ছিল ৭৭ লাখ ৮৭ হাজার টন, যা চাহিদার এক-তৃতীয়াংশেরও বেশি।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রতিদিন কমপক্ষে ২৫০ মিলিলিটার দুধ পান করা প্রয়োজন। তবে দেশে মানুষের দুধের গড় প্রাপ্যতা এর অর্ধেকের কম ১২২ মিলিলিটার। এ বাস্তবতায় আজ ১ জুন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো বাংলাদেশেও পালিত হচ্ছে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস। খাদ্য হিসেবে দুধের গুরুত্বকে স্বীকৃতি দিতে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ২০০১ সালে প্রতি বছরের ১ জুনকে বিশ্ব দুগ্ধ দিবস ঘোষণা করে। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য—‘দুধ উপভোগ করুন।’
প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে দেশে ১ কোটি ৭৫ লাখ ৬৩ হাজার টন চাহিদার বিপরীতে দুধ উৎপাদন হয় ১ কোটি ৬ লাখ ৮০ হাজার টন। ২০১৭-২০১৮ অর্থবছরে চাহিদা ছিল ১ কোটি ৫৮ লাখ ১৯ হাজার টন, উৎপাদন হয় ৯৪ লাখ ১ হাজার টন। অর্থাৎ ঘাটতি বাড়ছে।
বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) সর্বশেষ কৃষি শুমারি অনুসারে, দেশে মোট দুগ্ধবতী গবাদিপশু রয়েছে ২৯ লাখ ২৬ হাজার ৫৭৪টি। এর মধ্যে দেশি গাভি ২২ লাখ ৪ হাজার ৭৬৩টি, সংকর জাতের গাভি ৫ লাখ ২৭ হাজার ২২৮, দেশি মহিষ ৯৩ হাজার ৪০২, সংকর জাতের মহিষ ৬ হাজার ৪৬৪, ছাগল ৯৩ হাজার ৪৯০টি।
দুগ্ধবতী পশু অনুপাতে দেশে দুধ উৎপাদন অনেক কম বলে মনে করেন শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের দুগ্ধ বিজ্ঞান বিভাগের চেয়ারম্যান ডা. মো. আসাদুজ্জামান। তিনি আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘নেদারল্যান্ডসে দুগ্ধবতী পশুর সংখ্যা আমাদের চেয়ে অনেক কম, মাত্র ১৬ লাখ। অথচ দুই দেশে দুধ উৎপাদনের পরিমাণ একই। এর কারণ, আমাদের দেশীয় গাভি দিনে ১-২ লিটার দুধ দিলেও উন্নত জাতের গাভি দেয় ২০-৩০ লিটার।’
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, দেশে দুধ উৎপাদন বাড়াতে কম দুধ দেওয়া গাভি কমিয়ে বেশি দুধ দেওয়া গাভির সংখ্যা বাড়াতে হবে।
বিবিএসের তথ্য বলছে, দেশে সবচেয়ে বেশি দুধ আসে দেশি গাভি থেকে, দৈনিক ৫৭ লাখ ৮০ হাজার ১৩৮ লিটার। সংকর জাতের গাভি থেকে ৪১ লাখ ১০ হাজার ১৯৭ লিটার, দেশি মহিষ থেকে ৪ লাখ ৪৩ হাজার ৫২৩ লিটার, সংকর জাতের মহিষ থেকে ৪৬ হাজার ৩৮৮ লিটার এবং ছাগল থেকে দিনে ৬৫ হাজার ৪৮৭ লিটার দুধ আসে।
বাংলাদেশ ডেইরি ফার্মার্স অ্যাসোসিয়েশনের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট ও আইমান অ্যাগ্রো ভেটের মালিক আলী আজম রহমান শিবলী বলেন, ‘দেশের উপযোগী হাইমেরিটের জেনেটিক গাভি আনলে খামারিরা উপকৃত হবে। দুধের ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব হবে। দামও কমবে।’ তিনি বলেন, গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় দুধ উৎপাদন ব্যাহত হচ্ছে। গো-খাদ্যের দামও কমাতে হবে।’
অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে দেশে গরু, ছাগল, ভেড়া ও মহিষ ছিল ৫ কোটি ৫১ লাখ ৩৩ হাজার। ২০২১-২২ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫ কোটি ৬৭ লাখ ৩৪ হাজার। এর মধ্যে গরু ২ কোটি ৪৭ লাখ, মহিষ ১৫ লাখ ৮ হাজার, ছাগল ২ কোটি ৬৭ লাখ ৭৪ হাজার, ভেড়া ৩৭ লাখ ৫২ হাজার।
সার্বিক বিষয়ে জানতে চাইলে প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ডা. মো. এমদাদুল হক তালুকদার আজকের পত্রিকাকে বলেন, ‘মাংস উৎপাদনে দেশ এখন স্বয়ংসম্পূর্ণ। দুধের উৎপাদন বাড়াতে প্রাণিসম্পদ ও ডেইরি উন্নয়ন প্রকল্প (এলডিডিপি) নেওয়া হয়েছে। এখন দুধে ঘাটতি খুব কম। শিগগিরই আমরা দুধেও স্বয়ংসম্পূর্ণ হব।’