গোয়ালন্দ (রাজবাড়ী) প্রতিনিধি
পদ্মা নদীতে তীব্র স্রোতের জন্য রাজবাড়ীর গোয়ালন্দ উপজেলার দৌলতদিয়া ঘাট ও মানিকগঞ্জের পাটুরিয়া নৌপথে ফেরি চলাচল ব্যাহত হয়েছে। গতকাল রোববার সকাল থেকেই দৌলতদিয়া ঘাট এলাকায় যানবাহনের অনেক চাপ পড়েছে। তীব্র স্রোতের সঙ্গে ফেরি স্বল্পতার কারণে সকাল থেকেই ঘাটে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
নদী পাড়ি দিতে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল থেকে আসা ঢাকামুখী এসব গাড়িকে ফেরিতে উঠতে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কে চার থেকে আট ঘণ্টা করে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
গতকাল সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে, দৌলতদিয়া ঘাট এলাকার জিরো পয়েন্ট (৩ নম্বর ফেরি ঘাট) থেকে সরকারি ওয়াজেদ চৌধুরী টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ পর্যন্ত প্রায় ছয় শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক ও দূরপাল্লার বাসের দীর্ঘ সারি।
সেই সঙ্গে দৌলতদিয়া ঘাট থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে গোয়ালন্দ মোড় এলাকায় আরও অন্তত দুই শতাধিক পণ্যবাহী ট্রাক নদী পারের অপেক্ষায় সিরিয়ালে আটকে আছে। এর মধ্যে এক কিলোমিটার জুড়ে আছে দূরপাল্লার বাসের সারি। এই যানবাহনের চাপ আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন যানবাহনের চালকেরা।
বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন করপোরেশন (বিআইডব্লিউটিসি) সূত্রে জানা গেছে, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ২০টি ফেরি থাকলেও তীব্র স্রোতের কারনে দুটি ডাম্প (টানা) ফেরি বন্ধ রাখা হয়েছে। এ ছাড়া আরও একটি ফেরি যান্ত্রিক ত্রুটির কারনে পাটুরিয়া ভাসমান কারখানায় মেরামত করা হচ্ছে। বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌপথে ছোট-বড় ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। ফেরি বৃদ্ধি পেলে খুব শিগগিরই এই চাপ কমবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বরিশাল থেকে ঢাকার উদ্দেশে যাওয়া ট্রাকচালক মো. মিলন হাওলাদার বলেন, গত এক মাসে ঘাটে এসে বেশিক্ষণ সিরিয়াল আটকে থাকতে হয়নি। গতকাল রোববার ৮টার দিকে গোয়ালন্দ মোড়ে এসে সিরিয়ালে আটকা পড়েন। সেখান থেকে তিন ঘণ্টা পর ছেড়ে দিলে ঘাটের দিকে আসেন। এখানে এসে পাঁচ ঘণ্টা সিরিয়াল ঠেলে দৌলতদিয়া টোল কমপ্লেক্সে পর্যন্ত আসতে পেরেছেন। ফেরি পেতে সন্ধ্যা পার হয়ে যাবে।
জরুরি গাড়ির সিরিয়ালে তাঁর মতো গাড়ি কীভাবে যাচ্ছে? এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ভাই ওঁরা সবাইকে ম্যানেজ করেই যাচ্ছে। ভিআইপি করে যাচ্ছে।’ ভিআইপি কী, জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভাই আমরা রাস্তা-ঘাটে চলি, সবকিছু খুলে বললে ঝামেলা হলে আপনি সামলাতে পারবেন না। তাই বলতেও চাই না।’
সিরিয়ালে আটকে থাকা ঢাকাগামী রাবেয়া পরিবহনের এক যাত্রী বলেন, গতকাল বেলা ১১টায় রাজবাড়ী থেকে ঢাকার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু প্রায় এক ঘণ্টা হয়ে গেলেও ফেরি ঘাটে যেতে পারেনি। এমন সিরিয়াল কিছুদিন আগেও ছিল না। ঘাটে এসে ফেরিগুলো গাড়ির জন্য অপেক্ষায় থাকত। কিন্তু হঠাৎ ফেরিঘাটে যানবাহনের চাপ পড়তে শুরু করেছে। আরও কত দেরি হতে পারে তিনি জানেন না। স্ত্রী-সন্তান নিয়ে নেমে লঞ্চে পার হবেন তাও পারছেন না। কারণ গাড়িতে কয়েকটা ব্যাগ আছে, সেই সঙ্গে নদীতে তীব্র স্রোতের কারনে লঞ্চে যেতেও ভয় হচ্ছে।
বিআইডব্লিউটিসির দৌলতদিয়া কার্যালয়ের ব্যবস্থাপক প্রফুল্ল চৌহান বলেন, তীব্র স্রোতের কারনে ফেরি চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। স্বাভাবিক সময়ের তুলনায় পারাপার হতে প্রায় দ্বিগুণ সময় বেশি লাগছে। তবে ফেরির সংখ্যা বৃদ্ধি করতে পারলে যানজট অনেক কমবে।
তিনি আরও বলেন, বর্তমানে দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া নৌরুটে ছোট-বড় মিলিয়ে ১৭টি ফেরি চলাচল করছে। দৌলতদিয়ায় পাঁচটি ঘাট আছে। পাঁচটি ঘাটে পাঁচটি পন্টুন এবং ১১টি পকেট রয়েছে।