কিশোরগঞ্জের অষ্টগ্রাম উপজেলার অষ্টগ্রাম-বাজিতপুর ডুবো সড়কের বাহাদুরপুর ও কারানল খালের সেতু দুটি খালে ভাঙন দেখা দেওয়ার কারণে শুরু থেকেই অব্যবহৃত রয়েছে। গত বছরের ১৫ মে ২৪ কোটি টাকা ব্যয়ে শুরু হয় সেতু দুটির সম্প্রসারণকাজ। এক বছর মেয়াদি প্রকল্পের সীমার আট মাস পরও শেষ হয়নি নির্মাণকাজ। এতে বিপাকে পড়েছেন তিন উপজেলার লক্ষাধিক মানুষ।
জেলা শহরের সঙ্গে হাওরবেষ্টিত অষ্টগ্রামবাসীর সড়ক যোগাযোগের জন্য ২০১১ সালে শুরু হয় অষ্টগ্রাম-বাজিতপুর ডুবো সড়কের নির্মাণকাজ। ২১ কিলোমিটার সড়কের বাহাদুরপুর ও কারানল খালে, দুটি সেতুসহ ১২৭ কোটি টাকায় সড়ক নির্মাণ শেষ হয় ২০১৪ সালে। সড়ক উদ্বোধনের পর হাওরাঞ্চলের তিন উপজেলা অষ্টগ্রাম, ইটনা ও মিঠামইনের লাখো মানুষ ভৈরব, কুলিয়ারচর, বাজিতপুর, ঢাকা, গাজীপুর ও চট্টগ্রাম অঞ্চলে দ্রুত এবং সহজে যাতায়াত শুরু করেন এই সড়কের মাধ্যমে।
তবে উদ্বোধনের কিছুদিনের মধ্যে খালে ভাঙন ও বর্ষায় পানিতে সেতুর সংযোগসড়ক বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। ব্যবহার করা যায়নি সেতুগুলো। কখনো কাঠ বা বাঁশের সাঁকো, কখনো নৌকায় মানুষ পারাপার হতো খাল দুটি।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তর সূত্র জানায়, মানুষের ভোগান্তি লাঘবে ২০২১ সালের ১৫ মে বাহাদুরপুর সেতুর মূল তিনটি স্প্যানের সঙ্গে ৩৭ দশমিক ১৯০ মিটার দৈর্ঘ্যের চারটি নতুন স্প্যান বসানো হয়। এতে ব্যয় হয় ১৫ কোটি টাকা। কারানল সেতুর মূল তিনটি স্প্যানের সঙ্গে ৯ কোটি টাকায় ৩১ দশমিক ১৯৮ মিটার দুটি নতুন স্প্যান উভয় পাশে বাড়ানোর কাজ শুরু করে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। চলতি বছরের ৩০ এপ্রিল প্রকল্প বাস্তবায়নের মেয়াদ শেষে সেতু দুটি খুলে দেওয়ার কথা ছিল। তবে অতিরিক্ত আট মাসেও শেষ হয়নি কাজ।
সরেজমিনে দেখা গেছে, দুটি সেতুর মূল কাজ শেষে ফিনিশিং করা ও পানি দেওয়া হচ্ছে। সেতুর উভয় পাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণে ফেলা বালু প্রস্তুত করছেন শ্রমিকেরা।
এই সেতু সম্প্রসারণকাজ যৌথভাবে বাস্তবায়ন করছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাগর বিল্ডার্স ও মাঈনুদ্দিনবাসী কনস্ট্রাকশন লিমিটেড। প্রতিষ্ঠান দুটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, গেল বর্ষায় হাওরে দ্রুত পানি চলে আসা ও সংযোগ সড়ক প্রকল্প প্রস্তাবিত পরিমাণের চেয়ে লম্বা হওয়ায় কাজ কিছুটা দেরি হয়। এখন সেতু নির্মাণ শেষে সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। দ্রুত সেতু দুটি জনগণের চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হবে।
অষ্টগ্রাম উপজেলা সদর ইউনিয়নের আলম মিয়া বলেন, ‘সেতুগুলো চালু হলে আমরা দ্রুত শহরে যেতে পারব। ২৫-৩০ মিনিট সময় কম লাগবে বাজিতপুরে যেতে। যখন খুশি যাতায়াত করতে পারব।’
বাহাদুরপুর গ্রামের রাসেল আহমেদ বলেন, ‘এই সেতু চালু হলে আমাদের যোগাযোগ উন্নত হবে। খরচ ও সময়—দুটোই বাঁচবে। এ ছাড়া হাওরের ধান কেটে কৃষকেরা সহজে বাড়ি নিয়ে আসতে পারবেন।
ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাগর বিল্ডার্সের বরাত দিয়ে প্রকল্প ব্যবস্থাপক প্রকৌশলী মো. আরিফুল ইসলাম বলেন, ইতিমধ্যে সেতুর মূল কাজ শেষ হয়েছে। এখন সংযোগ সড়কের কাজ চলছে। আশা করি ১০ ডিসেম্বর মানুষের জন্য সেতু খুলে দেওয়া যাবে।
কিশোরগঞ্জ সড়ক ও জনপদ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী রিতেশ বড়ুয়া বলেন, সংযোগ সড়কের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে। আশা করি ডিসেম্বরের প্রথম দিকে খুলে দেওয়া যাবে।