নিজস্ব প্রতিবেদক, ঢাকা
গতকাল শুক্রবার সকাল সোয়া নয়টা। রাজধানী ঢাকার উত্তর বাড্ডায় বাজারে কেনাকাটা করছিলেন ব্যাংক কর্মকর্তা আশরাফুল। ছোট মাছ, সবজি আর এক কেজি গরুর মাংস কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ। কষ্টের সুরে তিনি বলেন, প্রতিটা জিনিসের দাম আকাশছোঁয়া। দু-তিন পদ কিনতেই ১ হাজার টাকা শেষ হয়ে যায়। মা-বাবা, স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বড় সংসার। এক লিটার ভোজ্যতেল টেনেটুনে এক সপ্তাহ যায়। নিত্যপণ্য ছাড়াও তো আরও কিছু লাগে। সংসার চালানো দায়!
বাজারের এই করুণ অভিজ্ঞতা উত্তর বাড্ডার আশরাফুলের একার নয়। বলতে গেলে দেশের সিংহভাগ মানুষ একই অবস্থার মুখোমুখি। দ্রব্যমূল্যের চরম ঊর্ধ্বগতির কারণে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তরা। গরিবদের কথা বলা বাতুলতা!
গতকাল রাজধানীর বাড্ডা, রামপুরা, কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা যায়, সবজির দাম গত সপ্তাহের মতো অপরিবর্তিত থাকলেও অন্য নিত্যপণ্যের দাম বেড়েছে।
ওই সব বাজারে টমেটো বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ৪০-৫০ টাকা, শিম ৪০-৬০, বেগুন (গোল) ৮০, বেগুন (লম্বা) ৬০, ফুলকপি প্রতি পিস ৪০, পাতাকপি ৪০, করলা ৮০, গাজর ৪০, চালকুমড়া পিস ৪০, প্রতি পিস লাউ আকারভেদে বিক্রি হচ্ছে ৮০-১০০, বরবটির কেজি ১২০ ও মটরশুঁটির ১২০ টাকা।
দরদাম করে একটা লাউ ৮০ টাকায় কিনেছেন বলে জানালেন কারওয়ান বাজারে কেনাকাটা করতে আসা মামুন রহমান নামের আরেক চাকরিজীবী। একটি পত্রিকা অফিসে অল্প মাইনের চাকরিরত এ ব্যক্তি জানান, ভাই সবকিছুর দাম তো প্রতিনিয়ত বাড়ছে। কিন্তু বেতন তো বছরেও বাড়ে না। ডাল-ভাতে কোনোমতে টিকে থাকতে হচ্ছে।
উত্তর বাড্ডায় বাজার করতে আসা মিথুন জাহান নামের এক নারী বলেন, ‘বেগুনের কেজি এখনই ৮০ টাকা। সামনে রোজার মাস এলে কী যে হবে! এটা তো আগাম বার্তা মাত্র। বাজার নিয়ন্ত্রণের যেন কারও দায় নেই! আমরা কুটিল চক্রে আটকে গেছি।’
শুধু আলু গত সপ্তাহের দামে বিক্রি হতে দেখা গেছে। নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে কেজিতে ১৪-১৫ টাকায়। তবে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৫০-৫৫ টাকায়। গত সপ্তাহে তা ছিল ৪০-৪৫ টাকা। ভারতীয় পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫৫ টাকা।
কারওয়ান বাজারের পেঁয়াজ বিক্রেতা রুবেল বলেন, আমদানি ও উৎপাদন কম থাকায় বাজারে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে। বাজারে চায়না রসুন বিক্রি হচ্ছে কেজি ১২০ টাকায়। দেশি রসুন ৫০ টাকা। দেশি আদা ৬০ টাকা। চায়না আদার দাম কমে বিক্রি হচ্ছে ১২০ টাকায়।
বেড়েছে ডিমের দাম। লাল ডিম হালিতে ৩৮-৪০ টাকা। হাঁসের ডিম ৬০ টাকা। দেশি মুরগির ডিমের ডজন ২১০ টাকা। সোনালি (কক) মুরগির ডিমের ডজন ১৮০ টাকা। মুরগি ও গরুর মাংসের দামও বেড়েছে।
ডিমের দাম বেড়ে যাওয়ায় বিক্রিও কম হচ্ছে বলে জানিয়েছেন রামপুরা বাজারের ডিম বিক্রেতা শফিক আহমদ। বিক্রি কম হওয়ায় লাভও কম হচ্ছে। ফলে সংসার চালাতে কষ্টে হচ্ছে বলে জানিয়েছেন তিনি।