সকাল নয়টা, রাজধানীর পলাশী মোড়। পথ চেয়ে ফুটপাতের পাশে ১০-১২ জন নারী। এখান থেকে আধা কিলোমিটারের কম দূরত্বে আজিমপুর কবরস্থান। সেখানে রাস্তার পাশে প্রায় অর্ধশত লোকের ভিড়। সবার অপেক্ষা একটি ট্রাকের। সকাল সাড়ে ১০টার দিকে হাজির ট্রাক। ততক্ষণে লোকজনের ভিড় বেড়ে গেছে প্রায় চার গুণ।
দাম নাগালের বাইরে যাওয়ায় সরকার নিম্ন ও মধ্য আয়ের মানুষের জন্য সুলভ মূল্যে বিক্রি করছে কয়েকটি নিত্যপণ্য। এর মধ্যে দেশব্যাপী ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশ—টিসিবির মাধ্যমে ভর্তুকি দামে বিক্রি করছে তেল, চিনি ও ডাল। আর চাল ও আটা বিক্রি করছে খাদ্য অধিদপ্তরের মাধ্যমে। কম দামে পণ্য কেনার জন্য নির্ধারিত স্থানে ভোর থেকে নিম্ন আয়ের মানুষের ভিড় দেখা যাচ্ছে। নিম্নবিত্তের এ লাইন ট্রাকের পেছনে দিনে দিনে বড় হচ্ছে।
আজিমপুর থেকে পণ্য কিনছিলেন ফুটপাতের কাপড় বিক্রেতা ইকবাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘কম দামে পাওয়া যায় বইলা আমি এক ঘণ্টা আগে লাইনে দাঁড়াইছি।’ কামরাঙ্গীরচরের রনি মার্কেটের বাসিন্দা রংমিস্ত্রি খোরশেদও লাইনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তিনি বলেন, ‘দিনে যা আয় হয়, এখান থাইক্যা কিনবার পারলে একটু খাওয়া যায়।’ ইকবাল আর খোরশেদের মতো তিন শতাধিক লোক লাইনে দাঁড়িয়ে আছেন পণ্যের অপেক্ষায়।
টিসিবি জনপ্রতি দুই কেজি ডাল ১৩০ টাকা, দুই কেজি চিনি ১১০ টাকা এবং দুই লিটারের বোতল সয়াবিন তেল বিক্রি করছে ২২০ টাকা। অর্থাৎ তিনটি পণ্য কিনতে একজন ভোক্তার ব্যয় হচ্ছে ৪৬০ টাকা। অথচ বাজারে দুই লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল ৩২৬-৩৩০ টাকা, দুই কেজি ডাল ১৯০-২০০ টাকা এবং দুই কেজি চিনি ১৫০-১৫৬ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। টিসিবির তিনটি প্যাকেজ পণ্যের বাজারমূল্য ৬৬৬ থেকে ৬৮৬ টাকা। একজন ভোক্তা তা ভর্তুকি দামে কিনছেন ৪৬০ টাকায়। এতে তাঁর সাশ্রয় হচ্ছে ২০২ থেকে ২২৬ টাকা।
অপর দিকে খাদ্য অধিদপ্তর প্রতি কেজি খোলা আটা বিক্রি করছে ১৮ টাকা এবং প্যাকেট আটা ২৩ টাকায়। আর চাল বিক্রি করছে ৩০ টাকায়। অথচ খোলা আটার বাজারমূল্য ৩৩-৩৬ টাকা এবং প্যাকেট আটা ৪০-৪৫ টাকা। একজন ভোক্তা তিন থেকে পাঁচ কেজি চাল ও তিন থেকে পাঁচ কেজি আটা কিনতে পারছেন ভর্তুকি দামে। একজন ভোক্তার তিন কেজি চাল ও তিন কেজি প্যাকেট আটা কিনতে ব্যয় হচ্ছে ১৫৯ টাকা। একই পরিমাণ পণ্যের বাজারমূল্য ২৭৩ টাকা। অর্থাৎ ভোক্তার সাশ্রয় হচ্ছে ১১৪ টাকা। আর ৫ কেজির প্যাকেজ কিনতে ভোক্তার ব্যয় হচ্ছে ২৬৫ টাকা, যার বাজারমূল্য ৪৫৫ টাকা। এতে ভোক্তার সাশ্রয় হচ্ছে ১৯০ টাকা।
টিসিবির মুখপাত্র হুমায়ূন কবীর বলেন, ২২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাঁদের এই কার্যক্রম চলমান থাকবে। বৃহস্পতিবার (আজ) থেকে পেঁয়াজও বিক্রি করা হবে। রাজধানীতে ৮০টি ট্রাক এবং সারা দেশে ৪৪০-৪৫০টি ট্রাকে পণ্য বিক্রি হচ্ছে। তবে অনেকেই লাইনে দাঁড়িয়ে টিবিসির পণ্য কিনে তা অন্যত্র চড়া দামে বিক্রি করছেন। রাজধানীর প্রায় প্রতিটি স্পটেই এমনটি হচ্ছে বলে জানান তিনি।
খাদ্য অধিদপ্তরের পরিচালক (সরবরাহ, বণ্টন ও বিপণন বিভাগ) আনিসুজ্জামান বলেন, রাজধানীতে ২০টি স্থানে তাঁদের আটা ও চাল বিক্রি হচ্ছে। তাঁদের আটা অত্যন্ত মানসম্পন্ন। এ কারণে ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। একজন ভোক্তা তিন থেকে পাঁচ কেজি পর্যন্ত কিনতে পারবেন। তবে তাঁদের ট্রাকসংখ্যা আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে বলে জানান তিনি।